শীতের রাতে ফুটপাতে নালার পাশে প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী। আশপাশে মানুষের ভিড়। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফুটপাতে জন্ম হয় ফুটফুটে এক শিশুর। মায়ের নাড়িতে জড়িয়ে থাকা শিশুটি ফুটপাতের ধুলায় গড়াগড়ি করতে থাকে। কিন্তু এগিয়ে আসেনি কেউ। খবর পেয়ে ছুটে আসেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদুর রহমান। দ্রুত মা ও শিশুকে নিয়ে যান হাসপাতালে। সেখানে কাটা হয় নাড়ি। প্রাণে বাঁচলেন মা ও শিশু।
গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে নগরের আগ্রাবাদ জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সামনের ফুটপাতে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী ও কন্যাশিশুটি।
আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) আশরাফুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, সময়মতো মা ও শিশুকে হাসপাতালে আনা না হলে মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল। ধুলায় মাখা ছিল শিশুটি। এখন তাঁরা সুস্থ আছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আগ্রাবাদ এলাকার ভ্রাম্যমাণ চা–বিক্রেতা তারানা আক্তার ঘটনাস্থলে প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছর ধরে আগ্রাবাদ এলাকায় ঘোরাঘুরি করেন এক নারী। সবাই তাঁকে রোজিনা আক্তার নামে চেনে। দিনের বেলায় এদিক-ওদিক থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সামনের ফুটপাতে থাকেন। সোমবার রাতে রোজিনা প্রসব যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকলে লোকজন জড়ো হয়। পরে একটি কন্যাশিশুর জন্ম হয়। তখন শিশুটির নাড়িও কাটা হয়নি। এগিয়ে আসেনি কেউ।
তারানা আরও বলেন, ভিড় ঠেলে একজন পুলিশ সদস্য এগিয়ে এলেন। ওই নারী ও শিশুকে নিয়ে যান হাসপাতালে। পুলিশের অনুরোধে তিনিও সঙ্গে যান।
মা ও শিশুকে উদ্ধারের বিবরণ দিলেন পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছেন খবর পান। ওই সময় আশপাশেই ছিলেন তিনি। মুহূর্তের মধ্যে সেখানে ছুটে যান। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়ে তাঁদের দ্রুত মা ও শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এখন তাঁরা সুস্থ থাকায় তিনি অনেক খুশি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন নারী ও তাঁর শিশুর পাশে বসে আছেন পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান। গত সোমবার রাত আড়াইটায় তিনি বাসায় ফিরে যান। ভোরে আবার হাসপাতালে ফিরে আসেন। মা ও শিশুর জন্য নিয়ে আসেন নতুন কাপড়। নাম কী, বাড়ি কোথায় প্রশ্ন করা হলে ওই নারী কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু হাসতে থাকেন।
গাইনি ওয়ার্ডের রোগী রিনা আক্তার জানান, প্রসূতির কোনো অভিভাবক নেই। একজন পুলিশ সদস্য তাঁর দেখভাল করছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, শিশুটির মা মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে হওয়ায় কোথাও তিনি বেশিক্ষণ থাকতে চান না। কোথাও যাওয়ার জায়গাও নেই। ফুটপাতে থাকলে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এ জন্য আপাতত বেশ কিছুদিন হাসপাতালে রাখা হবে। তত দিন তিনি দেখভাল করবেন। পরে যা হওয়ার হবে।
পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানের এই কাজকে সাধুবাদ জানিয়ে নগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শুধু পুলিশ নন, সব মানুষের জন্য অনুকরণীয় হতে পারেন মাসুদ।
২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নগরের আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী রাস্তায় সন্তান প্রসব করেন। রাস্তা থেকে সেই শিশুকে উদ্ধার করে লালনপালন করছেন ডবলমুরিং থানার এসআই পল্টু বড়ুয়া। এই কাজের স্বীকৃতির জন্য পরে তাঁকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) দেওয়া হয়।
(প্রথম আলো)