রাহবার২৪

কিশোরগঞ্জে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে কোটি টাকা-স্বর্ণালঙ্কার : লালিত হচ্ছে কুসংস্কার

তবে ওলামায়ে কেরাম মনে করেন, পাগলা মসজিদ কেন্দ্রিক এক ধরনের কুসংস্কার ও শরীয়ত বিরোধী ধ্যান ধারনা লালিত হচ্ছে।

পাগলা মসজিদ। কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক একটি মসজিদ। এ মসজিদটিতে পাঁচটি লোহার বানানো দানবাক্স রয়েছে। প্রতি তিন মাস পরপর বাক্সটি খোলা হয়। কিন্তু এবার দানবাক্স খুলে সবার চক্ষু যেন চড়কগাছ!

তিন মাস পর শনিবার দানবাক্স খুলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে টাকা গণনা।

এর আগে গত বছরের ১৩ অক্টোবর এসব দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ১ কোটি ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬৮৫ টাকা। এ ছাড়া বিদেশি মুদ্রাসহ স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কার।

মসজিদটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসন বলছে, এসব অর্থ এ মসজিদসহ জেলার সব মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।

মসজিদের খতিব, এলাকাবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন বলছেন, এখানে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়- এমন ধারণা থেকে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে দান করে থাকেন।

স্থানীয়রা জানায়, একসময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে।

মুসলিম ও হিন্দু-নির্বিশেষে সব লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়।

ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।

কিন্তু ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের নানা প্রান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দানখয়রাত করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিম নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে।

তারা নগদ টাকা-পয়সা,স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে।

আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন এ মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।

জেলা প্রশাসককে (ডিসি) সভাপতি করে প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনকে নিয়ে গঠিত কমিটি এ মসজিদটির ব্যবস্থাপনা ও দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন।

আর দানের বিপুল অর্থ মসজিদ ও মসজিদ ক্যাম্পাসে অবস্থিত মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।

তবে ওলামায়ে কেরাম মনে করেন, পাগলা মসজিদ কেন্দ্রিক এক ধরনের কুসংস্কার ও শরীয়ত বিরোধী ধ্যান ধারনা লালিত হচ্ছে। কারণ, মসজিদের নামে মান্নত করা যায় না কিংবা মান্নতের টাকা মসজিদে লাগানো যায় না। বিদায় লোকদেরকে বলে দিতে হবে যে, তোমরা মসজিদের নামে কখনোই মানত করতে পারবে না। আল্লাহর নামে মানত করতে হবে অতঃপর মান্নতের টাকা-পয়সা গরিব মিসকীনদের মধ্যে বন্টন করে দিতে হবে। সাধারণ দানের টাকা পয়সা মসজিদে দেয়া যাবে। 

Follow us

get in touch. stay updated.

জনপ্রিয়