রাহবার২৪
rohinga- রোহিঙ্গা

রাখাইনে মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর বাড়ছে সেনা নির্যাতন

ওই নো-ম্যানস ল্যান্ডে ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে৷

মিয়ানমারের রাখাইনে আবারও সেনা অভিযান জোরদার করার কথা বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। তারা বলছে, নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযানে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করা হচ্ছে৷ এমনকি হত্যার হুমকিও দেয়া হচ্ছে৷ কিন্তু সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় রোহিঙ্গারা পালিয়ে তামব্রু-নাইখংছড়ি সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডেও আসতে পারছেন না৷

ওই নো-ম্যানস ল্যান্ডে ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে৷

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান আর্মি (এএ)-র বিরুদ্ধে চলমান সেনা অভিযানের মধ্যে গত ৪ জানুয়ারি দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর ১৩ জন সীমান্ত পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয়৷

তবে আরাকান আর্মির পক্ষ থেতে ৭ জনকে হত্যার কথা স্বীকার করা হয়েছে৷ আর জিম্মি থাকা আরো ১২ জনকে মুক্তি দেয়ার কথা জানানো হয়৷ এরপর থেকেই রাখাইনে মিয়ানমারের সেনা অভিযান আরো তীব্র হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে৷

এদিকে ৭ ডিসেম্বর মিয়ানমার দাবি করে, রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি এবং আরাকান আর্মির মধ্যে যোগাযোগ আছে৷ প্রসঙ্গত, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অধিকার সুরক্ষার নামে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে লড়ছে আরসা৷ আর ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি৷

মিয়ানমারের তমব্রু ও বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাও রাখাইনে সেনা অভিযান আরো তীব্র হওয়ার খবর পাচ্ছেন নানা সূত্রে৷

নো-ম্যান্স ল্যান্ডের রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ নো-ম্যান্স ল্যান্ড থেকে জানান, ‘আরাকান আর্মিকে নির্মূলে মিয়ানমারের সেনারা অভিযান চালাচ্ছে আর রোহিঙ্গা যাঁরা আছেন, তাঁরাও এই অভিযানের শিকার হচ্ছেন৷ আরাকান আর্মির সাথে রোহিঙ্গাদের যোগাযোগের অজুহাত তুলে তাঁদের হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে৷ তাঁদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে৷ নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলেও ওখানে যাঁরা আছেন তাঁদের কাছ থেকে খবর পেয়েছি৷’

তিনি আরো জানান, ‘রাখাইনের রোহিঙ্গারা চাইলেও নো-ম্যান্স ল্যান্ডের দিকে আসতে পারছেন না৷ কারণ, সীমান্তে কঠোর পাহারা বসানো হয়েছে, নৌকা চলাচলও বন্ধ৷ সীমান্ত এলাকায় সব ধরনের মুভমেন্ট বন্ধ৷ তবে টেকনাফ এলাকা থেকে কিছু রোহিঙ্গা প্রবেশের চেষ্টা করছে বলে খবর পেয়েছি৷’

টেকনাফের স্থানীয় নানা সূত্রের সঙ্গে কথা বলে কোনো রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে দু-চারদিনে প্রবেশ করেছে বলে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি৷ টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের নেতা রশীদ আহমেদ জানান, ‘আমরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে আরাকান আর্মির তীব্র লড়াইয়ের খবর পাচ্ছি৷ আর আরাকান আর্মি রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অভিযান চলাচ্ছে৷ তাঁদের ওপর নির্যাতন চলছে৷ যাঁরা পালানোর চেষ্টা করছেন তাঁদের ধরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে ক্যাম্প বানানো হয়েছে সেখানে নিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনী আটকে রাখছে৷ ক্যাম্পে নিয়ে আইডি কার্ড ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে৷’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমারের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযান শুরু করে৷ এর আগে ২০১২ সালেও মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়৷ এই দুই দফায় ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে৷

এরপর বাংলাদেশ-মিয়ানমার আলোচনা ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি হয় মিয়ানমার৷ গত ১৫ নভেম্বর প্রথম দফায় ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কোনো রোহিঙ্গাই ফেরত যেতে রাজি হননি৷

সূত্র : ডয়েচে ভেলে

Follow us

get in touch. stay updated.

জনপ্রিয়