রাহবার২৪

খবরদার! এই ফাঁদে পা দেবেন না : কানাডা আমেরিকা ২০ লাখ

আমি নিজে সর্বশান্ত হয়েছি, দেশের মা-বাবাকেও ফকির বানিয়েছি। আমার মতো করে আর কেউ যেন এমন প্রতারণায় না পড়েন, তাই আমার এই পোষ্ট।  

আবু আনাস


কানাডা ভিসা ২০ লাখ !!
আমেরিকা ভিসা ২০ লাখ !!
ইউরোপ ভিসা ১৫ লাখ !!
ভিসার আগে বা পরে ১ টাকাও নয়, সমস্ত পেমেন্ট পৌঁছানোর পরে।
.
এই রকম রঙচঙ মাখা বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দিয়ে আমার পরিচিত এক ভাই পথে বসেছেন।। তার করুন কাহিনী হুবহু তুলে ধরছি, যদি কারো কোন উপকারে আসে, এ আশায়।
.
উপরোক্ত রংচঙ্গা কোনও এক বিজ্ঞাপন দেখে ঢাকায় আভিজাতো এলাকায় একটা অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে চাই। এবং তারা বলে, ‘আমরা গ্যারান্টি দিয়ে আপনাকে বিদেশ নিয়ে যাবো। ২ বছর এর জন্যে জব ভিসা, মাসিক ২,০০০-২,৫০০ ডলার বেতন। ৫ বছর পরে নাগরিকত্ব পেতে আমরাই সাহায্য করবো। এমনকি ভিসার আগে ও পরে কোনও অর্থ প্রদান করতে হবে না, সমস্ত খরচ আপনি বিদেশ পৌঁছানর পরে আপনি যখন বিদেশ থেকে আপনার পরিবারকে ফোন দিয়ে বলবেন যে আপনি ভালোভাবে পৌঁছে গেছেন, তার পর আপনার পরিবার আমাদের টাকা দিবে। আমাদের আমেরিকা কানাডা তে সরাসরি প্রতিনিধি আছে, তারাই সরসরি আমেরিকা কানাডা থেকে আপনার নামে ভিসা ইসু করে পাঠাবে। তাই এখানে এম্বাসি ফেস করার কোনও ঝামেলা নেই।’
.
এক সঙ্গে এতো অফার পেয়ে আমি কনফিউসড। নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলাম, ‘ বিদেশ যাওয়া এতো সোজা? ‘মনের বাড়ী থেকে উত্তর পেলাম, ‘আরে কি আর, এক বার চেষ্টা করে দেখ, আমার তো ২৫ পয়সাও আগে দিতে হবে না, সমস্ত খরচ যেখানে আমেরিকা/কানাডা পৌঁছানোর পরে, সেখানে আবার টেনশন কি‘
.
যেই কথা সেই কাজ, বাড়িতে গিয়ে বাবা-মা এর সাথে আলোচনা করলাম। যেখানে সমস্ত খরচ পৌঁছানোর পরে সেহেতু বাবা-মা আর দ্বিধা না করে রাজী হয়ে গেলো। শুরু হয়ে গেল সুদের টাকা জোগাড় করা ও অবশিষ্ট জমিজমা বিক্রি করার প্রস্তুতি। ১৮-২০ দিনের মাথায় টাকা জোগাড় করে মা বাবার কাছে রেখে পাসপোর্ট নিয়ে আবার অফিসে গিয়ে নিজের নামটা বুকিং দিয়ে আসি। বুকিং এর সময় অরিজিনাল পাসপোর্ট সহ ২ কপি ফটো ও ন্যাশনাল আইডি এর ফটোকপি, এবং মোবাইল নাম্বার দিয়ে আসি।
.
৭ দিন পরে আমাকে ফোন করে অফিসে ডাকা হলো।। যথারীতি অফিসে যাবার পরে দেখলাম, সেখানে আমার মতো আরও ১১ জন অপেক্ষা করছে যারা কানাডা বা আমেরিকা যেতে চায়।। এর পরে অফিস থেকে বলা হল, টোটাল ১২ জন এর একটা গ্রুপ এদের প্রত্যেকের (৯ জন কানাডা, ৩ জন আমেরিকা) ভিসা রেডি। আমাদের ফ্লাইট ৪ দিন পরে।। ফ্লাইট ভারতের নিউ দিল্লী থেকে সরাসরি, তাই প্রত্যেকের পাসপোর্ট এ ইন্ডিয়ান ভিসা লাগানো আছে। ২ দিন পর ১২ জনের গ্রুপ বাংলাদেশ থেকে নিউ দিল্লীর উদ্দ্যেশে রওনা দিতে হবে। সঙ্গে তাদের প্রতিনিধি থাকবে। প্রত্যেকের ভিসা অনলাইনে ইস্যূ হয়ে গেছে, অনলাইন ভিসা কপি ও বিমান টিকিট নিউ দিল্লী থেকেই উনাদের প্রতিনিধি প্রত্যেক ক্যান্ডিডেটের হাতে দিয়ে দেবে।।
.
এই ১২ জনের ভেতর ২/১ জনের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিলো যে, পাসপোর্ট-এ স্টাম্প ছাড়া কি আসলেই তারা কানাডা যেতে পারবো? নির্ভয়ে ২/১ জন এই প্রশ্ন করেও ফেললো। কিন্তু তারা রিতিমত ধমক খেলো, ‘আরে মিয়া, আপনারা কি আমাদের থেকে বেশি বোঝেন, আমরা ২৫ বছর ধরে এই লাইন-এ। আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। আপনাদের আগে আমাদের যে সব ক্যান্ডিডেট বিদেশ গেছে এই নেন ফোন নাম্বার, এদের সাথে কথা বলুন।’
.
তারা আরও বললো, ‘আপনাদের কি টেনশন? আপনারা কি ২৫ পয়সা পেমেন্ট করেছেন? আপনাদের পিছনে আমাদের কত করে ইনভেস্ট করতে হয়েছে জানেন? একটা কানাডার ভিসা রেডি করতে কতো টাকা লাগে জানেন? এর পরে প্লেনের টিকিট, নেটে সার্চ দিয়ে দেখেন কত খরচ।’ কথাগুলো শোনার পর আমরা সবাই চুপ হয়ে গেলাম।
.
নির্ধারিত তারিখে সবাই নিউদিল্লীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
.
ঢাকা থেকে ট্রেনে কোলকাতা, এর পর কোলকাতা থেকে নিউদিল্লী ট্রেনে সব মিলিয়ে ২/৩ দিন পর আমরা নিউদিল্লী পৌছলাম। নিউদিল্লী স্টেশন থেকে প্রায় ৩/৪ ঘন্টা প্রাইভেটকারে করে কোন এক স্থানে নিয়ে রাতে আমাদের ১২ জনের গ্রুপকে রাখা হলো। কোথায় রাখা হল কেউ সঠিক বলতে পারলাম না। একটা নিরিবিলি এপার্টমেন্ট, আশেপাশে ফাঁকা এমন এক ভুতুরে পরিবেশ।
.
আমাদের প্রত্যেককে আলাদা ভাবে ডেকে নেওয়া হলো। অতপর প্রত্যেককে আলাদা ভাবে খুব করে পিটালো। এবং সারারাত একটা রুমে আটকিয়ে রাখলো। ঐ রাতে কোনরূপ খাবার পানিও দেওয়া হলো না।
.
পরের দিন সকালে এক একজন করে অন্য ফাঁকা রুমে নিয়ে গেলো এবং মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বাড়িতে ফোন করে বলতে বাধ্য করলো, “মা/বাবা আমার আজ রাতে কানাডার ফ্লাইট। আমার জন্যে দোয়া করবে সবাই” !!
.
প্রত্যেকে আলাদাভাবে তাদের পরিবারের সাথে একই কথা বলালো এবং এর পরে ২ দিন আমাদের একসাথে সেই বদ্ধ ঘরে আটকিয়ে রাখলো। আমাদের দিনে মাত্র ১ বার খাবার পরিবেশন করা হতো।
.
২ দিন পরে একই স্টাইলে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বাড়িতে ফোন করতে বাধ্য করলো যে, “মা/বাবা আমি ভালো ভাবে কানাডা/আমেরিকা পৌঁছে গেছি। কোথায়ও কোনও সমস্যা হয়নি। এমনকি আগামিকাল থেকে আমি কাজে যোগ দিবো। তোমরা এজেন্টদের প্রাপ্য টাকা দিয়ে দাও”!!
.
নিরীহ বাবা মা দ্বিধা না করে চুক্তিবদ্ধ টাকা দিয়ে দিলো। টাকা হাতে পাবার খবর পাবার পর সেই রাতে আমাদের সবাইকে নিউ-দিল্লী স্টেশনে পৌঁছে দেয়, সঙ্গে কোলকাতা ফেরার ট্রেনের টিকিট সহ।
.
আমি নিজে সর্বশান্ত হয়েছি, দেশের মা-বাবাকেও ফকির বানিয়েছি। আমার মতো করে আর কেউ যেন এমন প্রতারণায় না পড়েন, তাই আমার এই পোষ্ট।

Follow us

get in touch. stay updated.

জনপ্রিয়