মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাযি
“আপনাদের মেয়েদের স্কুল-কলেজে দেবেন না। বেশি হলে ক্লাস ফোর বা ফাইভ পর্যন্ত পড়াতে পারবেন। বিয়ে দিলে স্বামীর টাকা পয়সা হিসাব করতে হবে। চিঠি লিখতে হবে স্বামীর কাছে। আর বেশি যদি পড়ান, পত্রপত্রিকায় দেখছেন আপনারা, মেয়েকে ক্লাস এইট নাইন টেন এমএ বিএ পর্যন্ত পড়ালে ওই মেয়ে আপনার মেয়ে থাকবে না। অন্য কেহ নিয়ে যাবে। পত্র-পত্রিকায় এরকম ঘটনা আছে কিনা? ওয়াদা করেন। বেশি পড়ালে মেয়ে আপনাদের থাকবে না। টানাটানি করে নিয়ে যাবে আরেক পুরুষ।” (প্রথম আলো)
প্রথম আলো থেকেই উদ্ধৃতি দিলাম। হেফাজতের কারো ব্যাখ্যা কিংবা মন্তব্য উল্লেখ করলাম না। একটু খেয়াল করে দেখুন? বাক্যের শুরুতে আল্লামা আহমদ শফী মূলত শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। অন্তত প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের কথা বলেছেন। আর না হয় একজন নারী সংসার পরিচালনায় স্বামীকে সহযোগিতা বা নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সফলভাবে পালন করতে পারবে না।
এরপরে তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন এবং কেন নিষেধ করেছেন সে কারণও তিনি উল্লেখ করেছেন। সেটি হচ্ছে- পত্রপত্রিকায় হরহামেশাই আমরা দেখতে পাচ্ছি নারী নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, নারী নিপীড়নের ঘটনা।
আহমদ শফী সে কথাটাই বলেছেন। বর্তমানে নারীরা এতটাই নিরাপত্তাহীনতায় আছে যে, একজন নারী উচ্চশিক্ষা করতে গেলে ইজ্জত সম্ভ্রম নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এখন যদি নারী তার ইজ্জত সম্ভ্রম রেখে ধর্ম-কর্ম পালন করে উচ্চশিক্ষা নিতে পারে তাহলে আর বাধা কোথায়?
আহমদ শফী সাহেব বাধা হিসেবে কারণ দেখিয়েছেন নারীর নিরাপত্তাহীনতা। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় আছে কি? আর সেজন্যেই জাতির অভিভাবক হিসেবে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি ওয়াদা নিয়েছেন যে, উচ্চশিক্ষার নামে যাতে মানুষ তার কন্যাদের কে চরম অনিরাপত্তায় ঠেলে না দেয়।
এখন আহমদ শফী সাহেবের বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক না করে যারা দেশ পরিচালনায় রয়েছেন তাদের জন্য উচিত হচ্ছে নারীর জন্য নিরাপদ এবং শঙ্কামুক্ত শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করা। নারীর জন্য পৃথকশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা। মূলত আহমদ শফী সাহেব তার বক্তৃতার মাধ্যমে নারীর নিরাপত্তা ,নারীর শঙ্কামুক্ত জীবনের কথাই বলেছেন।
আল্লামা আহমদ শফী তার বক্তৃতায় মেয়েদেরকে মাদ্রাসায় পড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। যে বিষয়টি বাম মিডিয়াগুলো কৌশলে চতুরতার সঙ্গে এড়িয়ে গেছে। কারণ তাদের উদ্দেশ্য আহমদ শফীর বক্তৃতা প্রচার করা নয়; বরং তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আহমদ শফীর বক্তৃতা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাকে সমাজের চোখে হেয় প্রতিপন্ন করা। যে কাজটি বরাবরই এ মিডিয়াগুলো করে থাকে। তাই আমাদেরকে বড় সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।