রাহবার২৪

আল্লামা শফীর ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হতে দেখে কষ্ট পাচ্ছি : মাওলানা মামুনুল হক

মাওলানা মামুনুল হক

শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রাহিমাহুল্লাহ বাংলাদেশের ইসলামী অঙ্গনের অত্যুজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম ৷ ইসলামের বহুমুখী খেদমতে বাংলার শতবর্ষের ইতিহাসে বিরল প্রতিভা ৷ দ্বীন-মিল্লাত দেশ ও জাতির জন্য পালিত ভূমিকার বিশ্লেষণে তাঁকে সময়ের অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব বললে একটুও কি বাড়িয়ে বলা হবে ?

তার সমকালে বুখারী শরীফের দরসের ক্ষেত্রে অতুলনীয় না হলেও উপমহাদেশের অনন্য তাঁকে বলতেই হবে । সেই ষাটের দশকে-যখন মাতৃভাষায় ইসলামের সাহিত্যচর্চার পরিধি হাতেগোনা-সেই সময়ে বুখারী শরীফের মত ইতিহাসসেরা ইলমী কিতাবের যথাযোগ্য বাংলা ভাষ্য তাঁর অমর কীর্তি । নিঃসন্দেহে এক্ষেত্রে তিনি অনন্য পথিকৃৎ । অর্ধশতাব্দীকাল বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তিনি চমৎকার উপস্থাপনায় বয়ান করেছেন জনসাধারণের মাঝে । কি শিক্ষিত কি অশিক্ষিত- সকলের উপযোগী ইসলামের মুখপাত্রের ভূমিকায় তার চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন । ইসলামী আন্দোলন ও সংগ্রামের রাজপথে আপোষহীন, দূরদর্শী ও যোগ্য নেতৃত্বের মানদণ্ডে কালোত্তীর্ণ এক মহাপুরুষ হিসেবে ইতিহাস তাঁকে স্মরণ করবে । তাসনিফ তাদরীস তাহরীক ও তাকরীর সব ময়দানের অবদান বিবেচনায় বাস্তবিকই অতুলনীয় এক মহাপুরুষের নাম শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রাহিমাহুল্লাহ ।

বাংলাদেশে ইসলামী সংগঠনের জগতে তাঁর নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছিল একটি চমৎকার সুশৃংখল সংগঠন-বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস । তাঁর সুনিপুণ নেতৃত্বেই প্রতিষ্ঠিত ও উন্নতির চরম শিখরে আরোহিত দেশসেরা ইসলামী বিদ্যাপীঠের নাম জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া । বাংলাদেশের ইতিহাসে ইসলামী সংগঠনগুলোর সফলতম ঐক্যবদ্ধ জোট ইসলামী ঐক্যজোট তার অনন্য নেতৃত্বের সুফল ।

শাইখুল হাদীস রাহিমাহুল্লাহ ইন্তেকাল করেছেন ২০১২ সালের আগস্ট মাসে । কিন্তু যদি হযরত শাইখের জীবনের পড়ন্ত বেলার ইতিহাস তালাশ করেন, তাহলে তার ইন্তেকালের চার-পাঁচ বছর আগ থেকেই তাকে আপনি খুঁজে পাবেন একান্ত পারিবারিক পরিসরের নিরাপদ আশ্রয়ে । ২০০৯ সালেই তিনি জামিয়া রাহমানিয়ার সর্বোচ্চ পদ থেকে সরে দাঁড়ান । তখন থেকে জামিয়া রাহমানিয়ার শাইখুল হাদীস হিসেবে আমৃত্যু অধিষ্ঠিত ছিলেন শাইখুল হাদীস আল্লামা আশরাফ আলী রাহিমাহুল্লাহ । একই বছর তাঁর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমিরের দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি নেন তিনি । নিজের সুযোগ্য উত্তরসূরী প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবিবুর রহমানকে দলের কান্ডারী হিসেবে দায়িত্ব স‌ঁপে দেন ।

আলহামদুলিল্লাহ পারিবারিকভাবে আমরাও চেয়েছিলাম বার্ধক্যের দুর্বলতার সময়ে তিনি বিতর্কের উর্ধ্বে থাকুন । জীবন্ময় অর্জিত সুনাম থাকুক অক্ষুন্ন । নিজেদের প্রয়োজন কিংবা স্বার্থের চেয়ে পিতা হিসেবে তাঁর মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করাকেই নিজেদের প্রধান দায়িত্ব মনে করেছিলাম । চারটি বছর তাঁকে সাংগঠনিক, প্রশাসনিকসহ সবধরনের দায়িত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে পরিবারের মাঝে আমরা আগলে রেখেছিলাম । মমতা আর ভালবাসার ছোঁয়ায় চেষ্টা করেছিলাম ভরে দিতে তার জীবন ।

আমার বাবা শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রাহিমাহুল্লাহকেই আমার বুঝার বয়স থেকে আন্দোলন-সংগ্রামের অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে মান্য করেছি । তার নেতৃত্বে করেছি অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম । বাবরি মসজিদ লংমার্চ থেকে ফতোয়া আন্দোলন। নাস্তিক মুরতাদ বিরোধী সংগ্রাম থেকে কওমি সনদের স্বীকৃতি দাবি । প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে শাইখুল হাদীস ছিলেন সফল নেতৃত্বের প্রতিকৃতি ।
২০১২ সালে আব্বাজান হযরত শাইখুল হাদীসের ইন্তেকালের পর বাংলাদেশের ইসলামী অঙ্গনে নেতৃত্বের আসনে আল্লামা আহমদ শফীকে যতটা মান্য করেছি, তার নাম যতটা বলিষ্ঠভাবে উচ্চারণ করেছি, সেটি বলাই বাহুল্য । তাঁর একজন আনুগত্যকারী কর্মী হিসেবে বড় দুঃখ অনুভব হচ্ছে, কষ্ট লাগছে, জীবন সায়াহ্নে শতাব্দীকালব্যাপী তাঁর অর্জিত ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হতে দেখে ।
বিক্ষুব্ধ মনে প্রশ্ন জাগছে, নবতিপর শতায়ু এই মহান ব্যক্তিত্বের চারপাশ কি শুধু স্বার্থপরদের দ্বারাই বেষ্টিত ?
আল্লামা আহমদ শফীর একজন‌ও কি ভালোবাসার মানুষ তার পাশে নেই ?

নেই কি তাঁর পরিবারেও এমন কেউ যে বন্ধ করে দিতে পারে বয়োবৃদ্ধ জাতীয় আস্থার প্রতীককে নিয়ে স্বার্থের এই ছিনিমিনি খেলা?
আল্লামা আহমদ শফীর কি কোন যোগ্য উত্তরসূরি নেই, যার স্কন্ধে দায়িত্বের বোঝা টুকু সঁপে দিয়ে সসম্মানে সরে দাঁড়াতে পারেন প্রশাসনিক নির্বাহী সকল দায়িত্বের যাতাকল থেকে ?

ঔরস্যে পালিত সন্তানরা কি বোঝেন না, বাবার সম্মানের চেয়ে সন্তানের জন্য পৃথিবীতে মূল্যবান কিছুই হতে পারে না ?
হতে কি পারে না, জীবন সায়াহ্নের এই দুর্বল সময়টুকু একান্ত আপনজনদের নিবিড় সান্নিধ্যে কাটানোর কোন উপায়?


মাওলানা মামুনুল হকের ফেসবুক পেজ থেকে

Follow us

get in touch. stay updated.

জনপ্রিয়