রাহবার ডেস্ক: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তবে এ মৃত্যু নিয়ে একটি কুচক্রি মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নির্জলা মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। তিন মাস পর ওই কুচক্রি মহল তার মৃত্যুকে অস্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে একটি মিথ্যা মামলাও দায়ের করে। দায়েরকৃত মামলাটি ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ এবং দেশের ‘স্থিতিশীল অবস্থা বিনষ্ট করার দুরভিসন্ধি’ বলে দাবি করেছেন হেফাজতের বর্তমান আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যৌথ ব্যবস্থাপনায় আল্লামা শাহ আহমদ শফির স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে মিথ্যাচার, মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও হেফাজত নেতৃবৃন্দকে জড়িয়ে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন হেফাজতের আমির এসব কথা বলেন।
বাবুনগরী বলেন, ‘তার (আল্লামা শফী) মৃত্যু নিয়ে একটি কুচক্রি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাছাড়া হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র ও হেফাজতের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে দায়েরকৃত এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরামদের সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আল্লামা শফীকে অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগে দায়েরকৃত মামলাটি রাজনৈতিক চক্রান্ত দাবি করে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, ‘এই মামলা মাদ্রাসা শান্তিপুর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দকে হয়রানি করার হীন ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। এ কুচক্রী মহল নিজেদের কর্মফলের পরিণতিস্বরূপ জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে ইসলামী নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। এখন তারা আল্লামা শফির মৃত্যু নিয়ে নতুন ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে চক্রান্তে নেমেছে। মামলাটি সেই চক্রান্তেরই অংশ।’
মাদ্রাসা মিলনায়তনে আয়োজিত উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেফাজতে ইসলামের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ড. নুরুল আবছার আজাহারী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের প্রধান উপদেষ্ঠা আল্লামা শাহ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, উপদেষ্ঠা আল্লামা নোমান ফয়জী, নায়েবে আমীর আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, মুফতি জসিম উদ্দীন, আল্লামা তাজুল ইসলাম, আল্লামা মোহাম্মদ শোয়াইব, সদস্য মুফতি কেফায়েতুল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা লোকমান হাকিম, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনীর, আল্লামা কবির আহমদ, আল্লামা হাবিবুল্লাহ আজাদি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদি, আল্লামা দিদার কাসেমী, সহকারী মহাসচিব আল্লামা আশরাফ আলী নেজামপুরী, আল্লামা ফোরকান আহমদ, আল্লামা ওমর কাসেমী, আল্লামা মাহমুদুল হাসান, আল্লামা আতাউল্লাহ, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস, প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, সহকারী অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আহসানুল্লাহ, মাওলানা শফিউল আলম, সহকারী আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার শাহ আজহারী, মাওলানা হারুন আজিজ, মুফতী আবু সাইদ, মুফতী রাশেদ, মুফতী আব্দুল্লাহ নাজিব, মাওলানা মোহাম্মদ বাবুনগরী ও মাওলানা আব্দুস সবুর প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, একটি চিহ্নিত দালালগোষ্ঠী আল্লামা শফীকে জিম্মি করে হাটহাজারী মাদরাসায় ব্যক্তিতন্ত্র কায়েম করে রেখেছিল। সেখানে নানা অনিয়ম এবং ছাত্রদের ওপর অব্যাহত হয়রানি ও নির্যাতন চালিয়ে তাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলা হয়েছিল। এ ছাড়া বেশ কিছু স্বনামধন্য শিক্ষককে মাদ্রাসা থেকে অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যুত করে বের করে দেওয়া হয়েছিল, যা ছিল অত্যন্ত অবমাননাকর। তাদের অনিয়ম ও ক্রমাগত হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসা ছাত্ররা জুলুমতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়।
আল্লামা শাহ আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি তার পরিবার ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সুস্পষ্টভাবে দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন। অনেক আগ থেকে তার শারীরিক অবস্থা এতই নাজুক ছিল, বেশ কয়েকবারই তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। সুতরাং, আল্লামা আহমদ শফিকে হত্যার অভিযোগ তুলে যারা মামলা করেছে, তারা একটি চিহ্নিত দালালগোষ্ঠী। তারা দেশের আলেম সমাজ ও সচেতন তৌহিদি জনতার কাছে প্রত্যাখ্যাত। মামলায় তথাকথিত হত্যার যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো অতিরঞ্জন ও মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আমরা মনে করি।
সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছায় ওনার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল এমনটা দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, তাকে হত্যা করা হয়েছিল এমন কোনো মেডিকেল রিপোর্টও দালালগোষ্ঠীরা জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারেনি। কিছুদিন আগে ঐ চিহ্নিত গোষ্ঠী আয়োজিত একটি সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে আল্লামা আহমদ শফির হত্যা বিষয়ক প্রশ্নগুলোরও তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। দায়েরকৃত মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে এবং বিবরণে যাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তারা কেউ এর সাথে সম্পৃক্ত নয়। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা সম্পূর্ণ মিথ্যা ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্যমূলক।