রাহবার২৪

এপ্রিল ফুল বনাম স্পেনের ঘটনা : সাম্প্রতিক বিতর্ক ও বিভ্রান্তির নিরসন (৪র্থ পর্ব/শেষ পর্ব)

স্পেনের মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালানোর ঘটনা বর্ণনায় বিভিন্ন দেশে কিছুটা পার্থক্য প্রত্যক্ষ করা গেলেও মূল ঘটনা সম্পূর্ণ সঠিক। নিঃসন্দেহে সেখানে মুসলমানদেরকে আগুনে পুড়িয়ে এবং জাহাজে ডুবিয়ে মারার ঘটনা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। যার বিবরণ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

এপ্রিল ফুল বনাম স্পেনের ঘটনা :

সাম্প্রতিক বিতর্ক ও বিভ্রান্তির নিরসন

(৪র্থ পর্ব/শেষ পর্ব)

————————————-
মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী
————————————-

.

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

॥ গ ॥

স্পেনের ঘটনার সাথে এপ্রিল ফুলের সম্পর্ককে অস্বীকারকারীগণ আরো দাবী করেছেন যে, নিরাপত্তার ঘোষণা দিয়ে মুসলমানদেরকে মসজিদে ঢুকিয়ে তালাবদ্ধ করে আগুন লাগিয়ে দেয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। তেমনি মুসলমানদেরকে জাহাজে তুলে তা ডুবিয়ে দিয়ে হত্যা করার ঘটনাও ঘটেনি।

এ সম্পর্কে জবাব হলো–স্পেনের মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালানোর ঘটনা বর্ণনায় বিভিন্ন দেশে কিছুটা পার্থক্য প্রত্যক্ষ করা গেলেও মূল ঘটনা সম্পূর্ণ সঠিক। নিঃসন্দেহে সেখানে মুসলমানদেরকে আগুনে পুড়িয়ে এবং জাহাজে ডুবিয়ে মারার ঘটনা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। যার বিবরণ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

বস্তুত ১৪৯১ সনের ১লা এপ্রিলের ঘটনার পূর্ববর্ণিত ডকুমেন্টে মুসলমানদেরকে যে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে এবং তাদের বাড়ীঘর ও সহায়-সম্পদে আগুন দিয়ে ধ্বংসতাণ্ডব চালানোর বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে, এটা এ ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণ। বলা বাহুল্য, সে সময় তাদের ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দেয়ার সময় তাদের অনেকে মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন, এমতাবস্থায় খৃস্টানরা সেই মসজিদে আগুন লাগিয়ে তাদেরকে হত্যা করে। আবার মুসলমানগণ আত্মরক্ষা করে সমূদ্রপথে উত্তর আফ্রিকার দিকে চলে যাওয়ার সময় তাদের অনেকের জাহাজ মাঝ দরিয়ায় ডুবিয়ে দেয়ার ঘটনারও ঐতিহাসিক বর্ণনা রয়েছে।

এভাবে গ্রানাডায় মুসলমানদের উপর খৃস্টানদের চালানো সীমাহীন জুলুম-অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসমূহ পূর্বাপর পর্যালোচনা করলে এপ্রিল ফুলের আলোচিত সেই ঘটনার মূল অংশ ঐতিহাসিকভাবেই প্রমাণিত হয়। তাই তাকে ভিত্তিহীন বলা যায় না বা অস্বীকার করা যায় না।

উক্ত ঘটনার ঐতিহাসিক ভিত্তির আরো প্রমাণ হলো, উইকিপিডিয়ার তথ্যে ইতিহাসবিদ হার্নান্দো দেল পুলগারের রবাতে পৃথিবীব্যাপী আগুনে পুড়িয়ে জীবন্ত মানুষ হত্যা বা অগ্নিসংযোগের দ্বারা জান-মাল বিনাশের তালিকায় স্পেনে ইনক্যুইজিশনের মাধ্যমে মুসলমানদেরকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। উইকিপিডিয়ার নিম্নোক্ত লিঙ্কে তার স্পষ্ট বর্ণনা দেখুন–

http://en.wikipedia.org/wiki/Execution_by_burning

আবার এ ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ডকুমেন্টারীও তৈরী করা হয়েছে। যেমন, তন্মধ্যের একটি ঐতিহাসিক ডকুমেন্টারী history of April fool শিরোনামে ইন্টারনেটের ইউটিউবে রয়েছে। তার লিঙ্ক নিম্নরূপ–

https://www.youtube.com/watch?v=qFXzEGwMqVA

তেমনি বাংলা টিভি নিউজ-এর পক্ষ থেকে এপ্রিল ফুলের উক্ত ইতিহাস বর্ণনা করে April Fool Brief History শিরোনামে বিশেষ ডকুমেন্টারী প্রকাশ করা হয়েছে। ইন্টারনেটের ইউটিউবে সেই ডকুমেন্টারী নিম্নবর্ণিত লিঙ্কে পাবেন–

https://www.youtube.com/watch?v=trqyj8INp2U

বস্তুত এসব ঘটনার সম্যক উপলব্ধির জন্য স্পেনের মুসলমানদের পূর্বাপর সমস্ত ইতিহাসকে সামনে রাখতে হবে। আর এ ইতিহাস যেহেতু মুসলিম আরবদের সাথে সংশ্লিষ্ট, তাই আরব ঐতিহাসিকগণ থেকে তার অধিক নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যাবে–এটাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া খৃস্টান লেখকগণ আর কতটুকু বলবেন যে, খৃস্টানরা স্পেনের মুসলমানদের উপর ইতিহাসের বর্বরতম নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছেন?

এ জন্য স্পেনের মুসলমানদের ঘটনা জানতে আরব ঐতিহাসিকগণের তথ্য-ইতিহাসই অধিক উপযুক্ত। তাদের লিখিত স্পেনের ইতিহাসে এসব বিষয় পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। এ ব্যাপারে বিশদভাবে জানতে আরবী ভাষাবিদগণ বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ইতিহাসের উস্তায আরব-ইতিহাস গবেষক ড. আবদুর রহমান আলী আল-হাজ্জীর التاريخ الاندلسي من الفتح الا السقوط নামক আরবী ইতিহাসগ্রন্থটি পড়ুন। সেই গ্রন্থটি ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। তার ডাউনলোড লিঙ্ক হচ্ছে–

http://www.4shared.com/office/2Cg7qZ7Dce/ _____.html?cau2=403tNull&ua=WINDOWS

এ ছাড়াও আরবীয় ইতিহাস-গবেষক ড. আলী আল-মুনতাসির আল-কাত্তানীর লিখিত انبعاث الاسلام في الاندلس আরবী কিতাবটি এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত, কিন্তু খুবই তথ্যবহুল। সেই কিতাবটি ইন্টারনেটে মাকতাবায়ে শামেলা থেকে ডাউনলোড করার লিঙ্ক হলো–

http://shamela.ws/index.php/book/37481

আর যদি সবিস্তরভাবে স্পেনের ইতিহাস এটুজেড কেউ জানতে চান, তাহলে প্রখ্যাত আরব ঐতিহাসিক আল-মাক্বক্বারী (অনেকে তার নাম মুকরী বলেন, তা ভুল) যার পূর্ণ নাম শাইখ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ আল-মাক্বক্বারী আত-তিলমিসানী–তার ৮ খণ্ডে লিখিত نفح الطيب من غصن الاندلس الرطيب (নাফহুত্ব ত্বীব মিন গুসনিল উনদুলুসির রত্বীব) নামক বৃহদাকার আরবী গ্রন্থ এ জন্য বেশ উপযোগী। তার উক্ত গ্রন্থের সবগুলো খণ্ড ইন্টারনেটে “আল-মাকতাবাতুল ওয়াক্বফিয়্যা” ওয়েবসাইটের নিম্নবর্ণিত লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করতে পারেন–

http://waqfeya.com/book.php?bid=7608

এ ছাড়াও এ বিষয়ে আরব ইতিহাসবিদগণের নির্ভরযোগ্য অনেক গ্রন্থ রয়েছে, যেমন, তন্মধ্য হতে কয়েকটি হচ্ছে–
* হুসাইন মুনিস লিখিত (২ খণ্ড) : موسوعة تاريخ الاندلس
* আবদুল্লাহ ইনান লিখিত : دولة الاسلام في الاندلس
* আবদুহু হাতামালাহ লিখিত : الاندلس : التاريخ والحضارة والمحنة
* ইবনে আযারী লিখিত (৪ খণ্ড) : البيان المغرب في اخبار الاندلس
* আলী আশ-শাত্তাত লিখিত : تاريخ الاسلام في الاندلس
* ইউসুফ আশবাখ লিখিত : تاريخ الاسلام في عهد المرابطين

——————————————
.
॥ ঘ ॥

স্পেনের ঘটনার সাথে এপ্রিল ফুলের সম্পর্ককে অস্বীকারকারীগণ ঘোরতর আপত্তি উত্থাপন করে বলেন, এপ্রিল ফুলের সাথে স্পেনের মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিয়ে মারার ঘটনা শুধু এদেশেই শোনা যায়। বাংলাদেশ ও বাংলাভাষা ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও এবং অন্য কোন ভাষায় এর অস্তিত্ব নেই। যদি সেই ঘটনা সত্য হতো, তাহলে অন্যান্য দেশে এবং অন্যান্য ভাষায়ও তার আলোচনা থাকতো।

তাদের এ বিভ্রান্তির জবাবে বলছি–এটা তাদের ভুল তথ্য। যা এপ্রিল ফুলের সাথে স্পেনের ঘটনাকে সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন রাষ্ট্রের অবস্থা সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতাকে প্রকাশ করে।

এপ্রিল ফুলের সাথে স্পেনের মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর কাহিনীর বর্ণনা শুধু এ বাংলাদেশে প্রচলিত নয়, বরং পৃথিবীর সব দেশের মুসলমানদের মধ্যে তার প্রচলন রয়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে সেই ঘটনা বর্ণনা করা হয় এবং বিভিন্ন দেশে স্পেনের মুসলমানদের সাথে খৃস্টানদের ধোঁকাবাজির বিভিন্ন ঘটনার বরাত দেয়া হয়।

এপ্রিল ফুলকে আরবী ভাষায় كذبة ابريل (কিযবাতু ইবরীল) অথবা كذبة نيسان (কিযবাতু নাইসান) বলে। এর অর্থ–এপ্রিলের মিথ্যা বলা। ইংরেজী এপ্রিল ফুল (April Fool) অর্থ–এপ্রিলের বোকা, একে আরব দেশগুলোতে كذبة ابريل নামে এ জন্য তা‘বীর করা হয়েছে, যেন নামের সাথেই ঘৃণা জুড়ে থাকে এবং এতে স্পেনের মুসলমানদেরকে বোকা প্রতিপন্ন করার মানসা পূরণ না হয়, বরং তাদের সাথে খৃস্টানদের মিথ্যা বলার ইতিহাসই প্রতিফলিত হয়। আর এর ভিত্তিতেই আরব কান্ট্রিগুলোতে এপ্রিল ফুল নিয়ে আলোচনায় মিথ্যা বলার খারাবি এবং তৎসঙ্গে স্পেনের মুসলমানদের সাথে খৃস্টানদের প্রতারণার ঘটনা নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হয়।

আরব রাষ্ট্রসমূহের বিভিন্ন দ্বীনী প্রতিষ্ঠান, উলামায়ে কিরাম, সামাজিক সংগঠন প্রভৃতি সকল মহল থেকে এপ্রিল ফুলের প্রসঙ্গের সাথে স্পেনের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এমনকি সৌদী আরবের রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ ইসলামী গবেষণা বোর্ড “লাজনায়ে দায়েমা (اللجنة الدائمة للبحوث العلمية والإفتاء في المملكة العربية السعودية)”-এর পক্ষ থেকেও এপ্রিল ফুলের সাথে স্পেনের ঘটনাকে সম্পৃক্ত করে আলোচনা করা হয়েছে।

সৌদী আরবের সরকারী সর্বোচ্চ গবেষণা ও ইফতা বোর্ড “লাজনায়ে দায়েমা”র ইলমী পর্যালোচনা ও ফাতওয়া কেন্দ্র “আর-রিয়াসাতুল আম্মাতু লিল বুহুসিল ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা (الرئاسة العامة للبحوث العلمية والإفتاء)”-এর পক্ষ থেকে এপ্রিল ফুল সংক্রান্ত ফাতওয়ায় (ফাতওয়া সংকলন, খণ্ড নং ৩৮ ও পৃষ্ঠা নং ২৬৯-২৭০) এপ্রিল ফুলের আলোচনায় খৃস্টানদের ধোঁকা ও মিথ্যার উৎসবের সাথে স্পেনের ঘটনার যোগসূত্রতার কথা উল্লেখ করে প্রসিদ্ধ স্পেনীয় ঐতিহাসিক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আন্নানের ইতিহাসগ্রন্থ “নিহায়াতুল উনদুলুস”-এর তৃতীয় ও চতুর্থ খণ্ডের বরাতে স্পেনে মুসলমানদের সাথে খৃস্টানদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির দ্বারা ধোঁকা ও প্রতারণা করার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তার বিস্তারিত তথ্য দেখুন “লাজনায়ে দায়েমা”র “আর-রিয়াসাতুল আম্মাহ”-এর নিম্নোক্ত ওয়েব সাইটে–

http://www.alifta.net/Fatawa/fatawaDetails.aspx…

উক্ত প্রামাণ্য তথ্যে এপ্রিল ফুলের সাথে সংশ্লিষ্ট করে খৃস্টানরা স্পেনের ক্ষমতা গ্রহণের পর ‍মুসলমানদের উপর যে চরম জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে তাদেরকে ফাঁদে ফেলে তাদের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের সীমাহীন বর্বরকাণ্ড ঘটিয়েছে, সেসব ঘটনার কথা বলা হয়েছে।

এ ছাড়াও আরব রাষ্ট্রসমূহে বিশেষভাবে স্পেনের মুসলমানদের গোড়ার ইতিহাস উল্লেখ করে এপ্রিল ফুলের সাথে তার যোগসূত্রতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। যার উপর ভিত্তি করে খৃস্টানরা ধোঁকায় ফেলে মুসলমানদের ঈমানী শক্তিকে নস্যাৎ করেছে। এপ্রিল ফুলের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে স্পেনের মুসলমানদের গোড়ার সেই ইতিহাস বর্ণনা করে সৌদী আরবের প্রসিদ্ধ মুহাক্কিক আলেম শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ গুরুত্বপূর্ণ হিদায়াত পেশ করেছেন। উক্ত হিদায়াতে তিনি বলেন–

وكتب بعضهم عن أصل هذه الكذبة قائلاً:
الكثير منا يحتفل بما يسمونه كذبة إبريل والترجمة الحرفية لها ” خدعة إبريل ”
ولكن كم منا يعرف الحقيقة المرّة الخفية وراء ذلك.
عندما كان المسلمون يحكمون أسبانيا قبل حوالي ألف سنة كانوا في ذلك الوقت قوة لا يمكن تحطيمها وكان النصارى الغربيون يتمنون أن يمسحوا الإسلام من العالم ولقد نجحوا إلى حد ما.
ولقد حاولوا الحد من امتداد الإسلام في أسبانيا والقضاء عليه ولم يفلحوا، حاولوا مرات عديدة ولم ينجحوا أبدا.
بعد ذلك أرسل الكفار جواسيسهم إلى أسبانيا ليدرسوا ويكتشفوا سرة قوة المسلمين التي لا تهزم فوجدوا أن الإلتزام بالتقوى هو السبب.
عندما اكتشف النصارى سر قوة المسلمين بدأوا في التفكير في استراتيجية تكسر هذه القوة وبناءا عليه بدأوا بإرسال الخمور والسجائر إلى أسبانيا مجانا.
هذا التكتيك (الطريقة ) من الغرب أعطت نتائجها وبدأ الإيمان يضعف عند المسلمين خاصة في جيل الشباب بأسبانيا. وكانت نتيجة ذلك أن النصارى الغربيين الكاثوليك أخضعوا كل أسبانيا تحت سيطرتهم منهين بذلك حكم المسلمين لذلك البلد الذي دام أكثر من ثمانمائة سنة. سقط آخر حصن للمسلمين وهو غرناطة في أول إبريل. ولذلك اعتبروها بمعنى خدعة إبريل (APRIL FOOL.
ومن تلك السنة إلى الآن يحتفلون بذلك اليوم ويعتبرون المسلمين حمقى. فهم لا يجعلون الحماقة وسهولة المخادعة في جيش غرناطة فقط بل في جميع الأمة الإسلامية. وعندما نحضر هذه الاحتفالات فإنه نوع من الجهل وعندما نحاكيهم المحاكاة العمياء في اللعب بهذه الفكرة الخبيثة فهو نوع من التقليد الأعمى الذي قد يؤكد غباء بعضنا في اتباعهم. ولو علمنا بسبب الاحتفال لما أمكن أن نحتفل بهزيمتنا أبدا.
وبعد أن عرفنا الحقيقة دعونا نقطع وعدا على أنفسنا بأن لا نحتفل بذلك اليوم. يجب علينا أن نتعلم دروسا من الأسبان ونصبح مطبقين حقيقة للإسلام ولا نسمح لإيماننا بأن يضعف أبدا. انتهى

অর্থ : “অনেক ঐতিহাসিক এপ্রিল ফুলের মূল কারণ সম্পর্কে বলেন–আমাদের বহু সংখ্যক লোক এপ্রিল ফুলের অনুষ্ঠান করেন এবং একে অপরকে ধোঁকা দেয়ার প্রথা উদযাপন করেন, কিন্তু আমাদের কতজন এর অন্তরালের আসল গোপন তিক্ত খবর জানেন? সেটা হলো : হাজার বছর আগে যখন মুসলমানগণ স্পেন শাসন করতেন, সে সময় মুসলমানদের শক্তি ছিলো অপ্রতিরোধ্য। খৃস্টান ও পশ্চিমারা চায় ইসলামকে পৃথিবী থেকে মিটিয়ে দিতে। তাতে তারা কিছুটা সফলও হয়েছে। সেভাবে তারা স্পেনে ইসলামের বিস্তারকে সীমিত ও রোধ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। এ ব্যাপারে তারা কয়েকবারই চেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু কখনো কামিয়াব হতে পারেনি। এরপর কাফের-খৃস্টানরা স্পেনে গোয়েন্দা পাঠালো, যেন তারা তদন্ত করে দেখে এবং মুসলমানদের অপরাজিত শক্তির রহস্য বের করে। তখন তারা জানতে পারলো যে, মুসলমানদের ঈমানী তাক্বওয়াই তাদের বিজয় লাভের একমাত্র কারণ। খৃস্টানরা যখন মুসলমানদের সেই শক্তির ভেদ জানতে পারলো, তখন তাকে খর্ব করার কৌশল নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে লাগলো। সেই ভিত্তিতে তারা স্পেনে নানারকম বাহারী মদ ও সিগারেট ফ্রি পাঠাতে শুরু করলো। পশ্চিমাদের এ কৌশল ফলপ্রসূ হলো এবং মুসলমানদের ঈমান দুর্বল হতে থাকলো। বিশেষ করে স্পেনের যুবক শ্রেণীর মধ্যে তা প্রকট রূপ ধারণ করলো। আর এর ফলাফল এই হলো যে, পশ্চিমা ক্যাথলিক খৃস্টানরা গোটা স্পেনকে তাদের করতলে নিয়ে নিলো–যেখানে মুসলমানরা দীর্ঘ আট শ’ বছরের অধিক কাল রাজত্ব করেছে। সেখানে মুসলমানদের সর্বশেষ ঘাটি গ্রানাডার শাসন ক্ষমতার অবসান হয় ১লা এপ্রিলে। এ জন্য খৃস্টানরা একে এপ্রিলের ধোঁকারূপে বিবেচনা করে এপ্রিল ফুল পালন করে। সেই বছর থেকে আজ পর্যন্ত তারা এ ‘এপ্রিল ফুল’ উদযাপন করছে এবং মুসলমানদেরকে বোকা সাব্যস্ত করছে। এতে তারা এ বোকা বানানোর কৌতুক শুধু গ্রানাডার মুসলিম সেনানীদের নিয়ে করছে না, বরং তামাম উম্মতে মুসলিমাকে নিয়ে উপহাস করছে। এ জন্য যখন আমরা এ ‘এপ্রিল ফুল’ পালনে অংশ নেই, তা আমাদের এক ধরনের আত্মঘাতিমূলক মুর্খতার প্রমাণ বহন করে। এ নিকৃষ্ট খেলায় যখন আমরা অন্ধ হয়ে তাদের সঙ্গ দেই, তখন আমরা আমাদেরকে নিয়ে তাদের খেলারই অন্ধ সঙ্গী হয়ে যাই। অতএব, সাবধান! যখন এপ্রিল ফুল উদযাপনের এ কারণ সম্পর্কে আমরা জানলাম, তখন কিছুতেই এটা পালন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হতে পারে না।”

শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ সাহেবের উক্ত বয়ানটিকে সৌদী আরব ভিত্তিক বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটে ইসলাম প্রচার সংস্থা IslamHouse.com তাদের ওয়েব সাইটে كذبة ابريل حقيقتها وحكمها শিরোনামে বই আকারে প্রকাশ করেছে। তাদের ওয়েব সাইট থেকে উক্ত পুস্তিকাটি পড়তে কিংবা ডাউনলোড করতে লগইন করুন–

https://islamhouse.com/ar/articles/199745/

এ ছাড়াও শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ এপ্রিল ফুল নিয়ে সম্প্রতি আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ তাকরীর পেশ করেছেন। উক্ত তাকরীরে তিনি বলেন–

وبعضهم كالإنجليز يسمونه يوم الحمقى والمغفلين، ويقال: إن ذلك كان من تهكم الكفار بالمسلمين الذين كانوا في الأندلس، فإنهم لما أحاطوا بهم بالمؤامرات، ومكروا بهم، واتبعوا تلك الطرق والحيل الخبيثة، اعتبروا سقوط آخر حصن للمسلمين في غرناطة في أول إبريل هو خدعة إبريل، ويوم الحمقى يقصدون به المسلمين

অর্থ : “অনেক মানুষ যেমন ইংরেজরা এপ্রিল ফুল দিবসের নাম দিয়েছে বোকা ও নির্বোধদের দিবস। এর হাকীকত সম্পর্কে উল্লেখ করা হয় যে, এ খৃস্টান-কাফেররা স্পেনের মুসলমানদের সাথে এমনই বোকা বানানোর ঘটনা ঘটিয়েছিলো। বস্তুত যখন খৃস্টানরা মুসলমানদের সাথে বিভিন্ন ফন্দি ও চক্রান্ত করেছে, মুসলমানরা তা না বুঝে সেই পথে পা বাড়িয়েছে এবং তাদের নিকৃষ্ট চক্রান্তের খপপরে পড়েছে। সেটাকে উপলক্ষ করেই খৃস্টানরা ১লা এপ্রিলে স্পেনের সর্বশেষ মুসলিম ঘাটি গ্রানাডার পতনকে এপ্রিল ফুল নাম দিয়ে উদযাপন করছে। এটাই হচ্ছে এপ্রিলের বোকা বানানোর রহস্য এবং এটাই খৃস্টানদের বোকা দিবস–যার দ্বারা তারা মুসলমানদেরকে নিয়ে উপহাস করে।”

শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ সাহেবের উক্ত বয়ানের অডিও ও সফট কপি তার নামে প্রতিষ্ঠিত ওয়েব সাইটে পাওয়া যায়। তা পেতে বা ডাউনলোড করতে সেই ওয়েব সাইটের নিম্নোক্ত লিঙ্কে লগইন করুন–

https://almunajjid.com/6032

এভাবে আরব দেশসমূহে ব্যাপকভাবে এপ্রিল ফুল সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে স্পেনের ঘটনাকে তার সাথে সম্পৃক্ত করে বর্ণনা করা হয়। এমনি আলোচনা রয়েছে হাওয়ামিরুল বূরাসাতিস সাউদিয়্যা (هوامير البورصة السعودية)-এর ওয়েব সাইটে। তার শিরোনাম হলো– ما معنى كذبة ابريل بمناسبة شهر ابريل (এপ্রিলের সংশ্লিষ্টতায় এপ্রিল ফুলের অর্থ কী?) সেখানে এপ্রিল ফুলের উদ্ভব সম্পর্কে শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ সাহেবের অনুরূপ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সেই বর্ণনা দেখুন তাদের নিম্নোক্ত ওয়েব সাইটে–

https://hawamer.com/vb/showthread.php?t=1023931

এমনিভাবে সৌদী আরবের মুআসসাসাতুল ইয়ামামাতুস সাহফিয়্যা (مؤسسة اليمامة الصحفية)-এর নিউজ পোর্টাল “الرياض (আর-রিয়াজ)” জার্নালে كذبة ابريل (কিযবাতু ইবরীল) শিরোনামে এপ্রিল ফুলের আলোচনায় খৃস্টানদের কর্তৃক স্পেনের মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিয়ে বিপর্যস্ত করার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সেই আলোচনা তাদের উক্ত “আর-রিয়াজ” নিউজ পোর্টালের নিম্নোক্ত ওয়েব সাইটে পাবেন–

http://www.alriyadh.com/143792

তেমনি সৌদী আরবের ইলমী গবেষণা মজলিস “মুনতাদাত আরব কিউ” ( منتديات عرب كيو) বা আরব কিউ ফোরামের পক্ষ থেকে এপ্রিল ফুলের আলোচনায় স্পেনের মুসলমানদের ইতিহাস বর্ণনা করে তাকে এপ্রিল ফুলের উৎস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত আলোচনা তাদের নিম্নবর্ণিত ওয়েব সাইটে দেখুন–

http://www.arabq.com/vb/archive/index.php/t-14151.html

অনুরূপভাবে ফিলিস্তীনের সামাজিক প্রতিষ্ঠান شبكة فلسطين (শাবকাতু ফিলিস্তীন)-এর পক্ষ থেকে كذبة ابريل والسياسة الدولية শিরোনামে এপ্রিল ফুল-এর আলোচনায় স্পেনের মুসলমানদের ইতিহাস সম্পর্কে আলোকপাত করে তার মাধ্যমে এপ্রিল ফুলের সূচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের সেই আর্টিক্যাল তাদের নিম্নোক্ত ওয়েব সাইটে পাবেন–

https://www.paldf.net/forum/showthread.php?t=57547

তেমনি আরব দেশসমূহের উলামা-মাশায়িখে কিরাম তাঁদের বয়ান ও খুৎবায় এপ্রিল ফুলের উদ্ভব বা উৎসের বর্ণনায় স্পেনের মুসলমানদের সেই ঘটনা তুলে ধরেছেন। যেমন, কুয়েতের আল-যাহরাহ’র অন্তর্গত আল-ক্বাসর এলাকার মসজিদে সালামাহ’র খতীব শাইখ বাসসাম সাহেব এপ্রিল ফুল সংক্রান্ত খুৎবায় স্পেনের মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে সীমাহীন নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালানোর বিষয় আলোচনা করেছেন। তার উক্ত খুৎবাহ ইন্টারনেটের ইউটিউবে নিম্নোক্ত লিঙ্কে পাবেন–

https://www.youtube.com/watch?v=7TFqtZ9aquU

অপরদিকে পাকিস্তান ও তৎপার্শ্ববতী দেশসমূহে স্পেনের মুসলমানদের শেষ দিকের ইতিহাস নিয়ে এপ্রিল ফুলের আলোচনা করা হয়। তা হলো–খৃস্টানরা ২ জানুয়ারী–১৪৯২ ইং চুক্তির মাধ্যমে গ্রানাডার ক্ষমতা লাভ করে পরবর্তীতে মুসলমানদের উপরে ইনক্যুইজিশনের ছত্রছায়ায় নানাভাবে ধোঁকা দিয়ে চরম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। এভাবে তারা লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে হত্যা করে স্পেনকে তারা সম্পূর্ণরূপে মুসলিমশূন্য করেছে। সে সময় খৃস্টানদের এ নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য মুসলমানরা অনেক কাকুতি-মিনতি করে। তখন খৃস্টানরা তাদেরকে জাহাজে করে অন্যত্র চলে যাওয়ার সুযোগ প্রদানের নামে ধোঁকাবাজির আশ্রয় নেয়। তারা মুসলমানদেরকে জাহাজে উঠিয়ে মাঝ দরিয়ায় জাহাজে ফুটা করে তাদেরকে ডুবিয়ে মারে। এরপর খৃস্টানরা মুসলমানদেরকে বোকা বানিয়ে ডুবিয়ে মারার সেই ঘটনা স্মরণ করে এপ্রিল ফুল পালন করে।

পাকিস্তানের করাচির “মাদরাসাতুল কাসিম”-এর পক্ষ থেকে সাইয়্যেদ আবিদ হুসাইন জায়েদী সাহেব তার এপ্রিল ফুল সম্পর্কিত আলোচনায় এ বিষয়টিই তুলে ধরেছেন। তার সেই বয়ান ইন্টারনেটের ইউটিউবে শুনতে লগইন করুন–

https://www.youtube.com/watch?v=boaZPUAs5Io

তেমনি “মুতাকাল্লিমে ইসলাম” খ্যাত পাকিস্তানের মুহাক্কিক আলেম মাওলানা ইলিয়াস গুম্মান সাহেব এপ্রিল ফুল সম্বন্ধে আলোচনা করতে গিয়ে এর সাথে সংশ্লিষ্ট স্পেনের মুসলমানদের ইতিহাসের কথা উল্লেখ করেছেন। তার উক্ত বয়ান April Fool; A Combination of Sins শিরোনামে ইউটিউবের নিম্নবর্ণিত লিঙ্কে পাবেন–

https://www.youtube.com/watch?v=8lxfbwoU-_Y

অনুরূপভাবে ভারতের হায়দারাবাদের অন্তর্গত গলকোন্দা’র ধানখোটা এলাকার “মসজিদে আবদুর রহমান”-এর খতীব শায়েখ নূরুদ্দীন উমেরী সাহেব এপ্রিল ফুল সংক্রান্ত বয়ানে স্পেনের মুসলমানদের সেই হৃদয়গাঁথা ইতিহাস তুলে ধরেছেন। তাঁর সেই বয়ান ইন্টারনেটের ইউটিউবে নিম্নবর্ণিত লিঙ্কে পাবেন–

https://www.youtube.com/watch?v=ER86kvRHmQU

অপরদিকে ভারতের নলেজ ফ্যাক্টরী (Knowledge Factory) নামক গবেষণা কেন্দ্র এপ্রিল ফুলের সাথে স্পেনের ঘটনার সূত্রতাকে প্রামাণ্য ভিডিও ডকুমেন্টারী তৈরী করেছে। April Fools History Explained শিরোনামের উক্ত ডকুমেন্টারী ইউটিউবের নিম্নোক্ত লিঙ্কে পাবেন–

https://www.youtube.com/watch?v=go53-qrRT2Q

এভাবে পৃথিবীর সকল দেশেই মুসলমানদের মধ্যে এপ্রিল ফুলের আলোচনায় স্পেনের ঘটনা বর্ণনার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। এর মাধ্যমে স্পেনের খৃস্টানদের কর্তৃক মুসলমানদেরকে বোকা বানিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর লোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা করে মুসলমানদের ঈমানী চেতনাকে জাগ্রত করা হয় এবং এপ্রিল ফুল পালনের বিভিন্ন খারাবির সাথে সেই ঘটনাকে স্মরণ করে মুসলমানদের আত্মমর্যাদাবোধের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

—————————

এ দীর্ঘ আলোচনার দ্বারা প্রমাণিত হলো–এপ্রিল ফুলের সাথে স্পেনের মুসলমানদের ঘটনার যোগসূত্র ঐতিহাসিকভাবেই প্রমাণিত রয়েছে। তাই তাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এতে যারা এপ্রিল ফুলের সাথে স্পেনের মুসলমানদের ঘটনাকে অস্বীকার করে মুসলমানদেরকে পুনরায় এপ্রিল ফুলের বোকা বানাতে চাচ্ছেন, তাদের ভুল ভাঙ্গবে আশা করি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সহীহ পথে পরিচালিত করুন। আমীন।
.
………………………………………………..
মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী
সম্পাদক, মাসিক আদর্শ নারী
muftishamsabadi@gmail.com

Follow us

get in touch. stay updated.

জনপ্রিয়