গ্রেফতার এবং জোর করে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেয়ার আতঙ্কে চলতি বছর ভারত থেকে এক হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এদের বেশিরভাগই বর্তমানে আছেন কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ট্রানজিট ক্যাম্পে।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেছেন, “আমরা শুনেছি প্রায় ৩০০টি পরিবারের এক হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা ভয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। এদের বেশিরভাগকেই উখিয়ার বালুখালীর ইউএনএইচসিআরের ট্রানজিট ক্যাম্পে আপাতত রাখা হয়েছে। কিছু কিছু হয়তো এখনও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ক্যাম্পে আছে। তবে সবাইকে ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। এখন তাদের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। জায়গা পেলে অন্যত্র সরানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “কিছুদিন আগে একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে ভারত থেকে জোর করে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর এ থেকে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ভয়ে রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশে চলে আসা শুরু করেছেন। আমরা এ রকম শুনেছি। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার চাপে আমাদের হিমশিম খাওয়ার অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে আবার ভারত থেকে রোহিঙ্গারা আসছেন, এটি আমাদের জন্য মোটেও ইতিবাচক নয়।”
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইকবাল হোসেন বলেন, “ভারত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা ৪৮ জন রোহিঙ্গাকে কুমিল্লা জেলা পুলিশ জব্দ করে। গত ৩ জানুয়ারি এদের কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে উখিয়া থানা পুলিশের মাধ্যমে এদের ঘুমধুম বালুখালী ইউএনএইচসিআর-এর ট্রানজিট ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়। এদের মধ্যে ১০ জন নারী, ১১ জন পুরুষ এবং ২৭ জন শিশু রয়েছেন। এসব ছাড়াও আরও অনেক রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশে চলে এসেছেন বলে আমরা শুনেছি। তবে সঠিক সংখ্যা বলা যাচ্ছে না।”
ভারতে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে বলে বলা হয়ে থাকে, যাদের মধ্যে সাড়ে ১৬ হাজার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তালিকাভুক্ত। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গত বছরের জুন মাসে জম্মু-কাশ্মীরসহ বিভিন্ন রাজ্যকে এই মর্মে নির্দেশ পাঠিয়েছিল যে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা’দের রাখতে হবে রাজ্যগুলোর এখতিয়ারভুক্ত পূর্বনির্ধারিত শিবিরে। তাদের বায়োমেট্রিক তথ্যসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য তালিকাভুক্ত করতে এবং তাদের কোনো ধরনের পরিচয়পত্র না দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আপত্তি উঠেছিল এই কারণে যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ব্যাপারে এসব নির্দেশ ছিল বৈষম্যমূলক। কেননা ভারতে অন্য যেসব শরণার্থী আছে, যেমন তিব্বত থেকে পালিয়ে আসা বৌদ্ধ শরণার্থী, তাদের ব্যাপারে এই ধরনের কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি।