আল্লামা আহমদ শফী রহ. এর জন্য স্বর্ণের তসবীহ,রূপার লাঠি বানিয়েছিলেন নেত্রকোনার ফারুক ঢালী সাহেব
রাহবার২৪.কমঃ সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর মুহাব্বত ও সম্মানে স্বর্ণের তাসবীহ ও রূপা খচিত লাঠি বানিয়েছিলেন নেত্রকোনা সদরে অবস্থিত ঢালী গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী জনাব ফারুক ঢালী।
জনাব ঢালী সাহেব একজন ধর্মপ্রাণ, আলেমদোস্ত ও দানবীর মানুষ। ওলামায়ে কেরামের সাথে সাক্ষাৎ হলে নেত্রকোণার ঐতিহ্যবাহী বালিশ মিষ্টি, তার নিজস্ব গার্মেন্টসের কাপড় ইত্যাদি হাদিয়া দেন তিনি। মসজিদ-মাদরাসায় নিয়মিত দান সাদকা করেন। তিনি হাটহাজারী মাদরাসার উল্লেখযোগ্য একজন দাতা সদস্য।
শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর খুব বেশি ভক্ত তিনি। যখন থেকে আল্লামা আহমদ শফী রহ. এর সাথে পরিচয় ও সাক্ষাৎ হয়েছে তখন থেকেই হযরতের জন্য পাগলপারা তিনি। এতটাই মুহাব্বত শ্রদ্ধা করতেন যে,কখনো হুজুরের নাম ধরে ডাকতেন না।
হুজুরকে “নয়নমণি ” বলে ডাকতেন। হাটহাজারী থেকে কেহ গেলেই জিজ্ঞাসা করতেন- আমার নয়নমণি কেমন আছেন ইত্যাদি।
সময়ে সুযোগে নেত্রকোনা থেকে হুজুরের জন্য হাদিয়াও পাঠাতেন। মাসকয়েক আগে হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক,নেত্রকোনার গর্ব,আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন উস্তাদ আল্লামা মুফতী আব্দুল হামীদ সাহেব দা.বা. এর সাথে গিয়েছিলাম ঢালী গার্মেন্টসে। এটা ছিলো জনাব ঢালী সাহেবের সাথে আমার দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। অল্প সময়ে বেশ মেহমানদারি ও আপ্যায়ন করেছেন আমাদেরকে।
মুফতী আব্দুল হামীদ সাহেব হুজুরের কাছে তাঁর নয়নমণি আল্লামা আহমদ শফী রহ. সম্পর্কে হাল পুরসি করলেন। জানালেন আহমদ শফী সাহেব হুজুরকে তিনি কতটা ভালোবাসেন। আলোচনার এক পর্যায়ে বললেন,আমি আমার নয়নমণি আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুরের জন্য স্বর্ণের তাসবীহ বানিয়ে দিয়েছি৷ এবং হুজুরের ব্যবহারের জন্য রূপা খচিত একটি লাঠি বানিয়েছি। এরপর আমাদেরকে সেই লাঠিটি দেখালেন। নীচের ছবিতে মুফতী আব্দুল হামীদ সাহেব, ঢালী সাহেব এবং রূপা খচিত সেই লাঠিটির ছবি দেখা যাচ্ছে।
সেদিন তিনি বলেছিলেন,ক’দিন পর আমি নয়নমণিকে দেখতে হাটহাজারী যাবো।তখন এই রূপা খচিত লাঠিটা হুজুরের জন্য হাদিয়া নিয়ে যাবো। স্বর্ণের তাসবীহ হাদিয়া দিয়েছি, আমার মনে বড় আশা নয়নমণিকে রূপার এ লাঠিটাও হাদিয়া দেবো।
আহ…জনাব ঢালী সাহেবের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলনা। রূপা খচিত সেই লাঠি তাঁর নয়নমণির সাক্ষাতে যাওয়ার আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ…।
আজ ফোনে কথা বলেছিলাম জনাব ঢালী সাহেবের সাথে ,বর্তমানে শারীরিকভাবে অনেকটা অসুস্থ তিনি। হাঁটাচলা করতে পারেন না। আহমদ শফী রহ.সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা মাত্রই কেঁদে কেঁদে আমাকে বললেন,হুজুর আমার মনে বড় কষ্ট, আমার নয়মণিকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে পারলাম না। জিজ্ঞাসা করলাম,আপনার নয়নমণিকে রূপার সেই লাঠিটা কি দিতে পেরেছিলেন? এটা শুনার সাথে সাথে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।বললেন,খুব যত্ম করে রেখেছি সেই লাঠিটা।কিন্তু নয়মণিকে দিতে পারিনি। আমার নয়নমণি তো চলে গেলেন আমাকে রেখে….। এই বলে কান্না……।
হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র উস্তাদ ও ইফতা বিভাগের সাবেক নেগরান,বৃহত্তর ময়মনসিংহে হাটহাজারী মাদরাসার মুহাসসিল,আমার
উস্তাদে মুহতারাম মুফতী আবু সাঈদ মাদার্শাহী দা.বা. এর সাথে এ বিষয়ে কথা বলে জেনেছি,জনাব ঢালী সাহেব ওলামায়ে কেরামকে খুব বেশি মুহাব্বত করেন। শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ, এবং শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাফিজাহুল্লাহুকে তিনি সবচে বেশি মুহাব্বত করেন। মুফতী আবু সাঈদ সাহেব হুজুরের মাধ্যমেই সেই তাসবীহ পাঠিয়েছিলেন। হুজুর জানালেন,তাসবীহটি পুরোপুরি স্বর্ণের ছিলনা তবে তাসবিহে স্বর্ণ মিশ্রন ছিলো। এবং তিনি রূপার পাত লাগিয়ে একটি লাঠি বানিয়েছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন তবে সেটা আমি এখনো দেখিনি।
স্বর্ণ মিশ্রনের তাসবীহ আর রূপার পাত দিয়ে লাঠি বানিয়ে হাদিয়া প্রদান করা, এটা অবশ্যই একজন আলেমদের প্রতি তাঁর সম্মানের সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ। একজন সাধারণ মানুষের অন্তরে একজন আলেমের প্রতি কতটা মুহাব্বত আর ভক্তি-শ্রদ্ধা থাকলে এমন স্মরণীয় কাজ করতে পারেন তা সহজেই অনুমেয়।
খবর নিয়ে যতটুকু জেনেছি,স্বর্ণের মিশ্রণ থাকায় হযরত নিজ ভক্তের দেওয়া সেই তাসবিহটা ব্যবহার না করে স্মৃতি হিসেবেই রেখেছেন।
এ কাজের মাধ্যমে একজন আলেমের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন নেত্রকোনার গর্ব জনাব ফারু ঢালী সাহেব। তাঁর এ কাজ স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আল্লাহ তায়া’লা জনাব ফারুক ঢালী সাহেবের সকল দ্বীনি খিদমত ও ওলামায়ে কেরামের প্রতি তার এ সম্মানকে কবুল করুন,তাঁকে সুস্থতার সহিত দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুন এবং আল্লামা আহমদ শফী রহ.কে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন,আমিন।
স্মৃতিচারণে –
এইচ.এম. জুনাইদ
নেত্রকোনা, বাংলাদেশ।
ফাযেলে দারুল উলুম হাটহাজারী।
সাবেক খাদেম, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী