রাহবার২৪

আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি, যদি আল্লাহ আকাশ থেকে কোন খাবার পাঠাতো: ইয়েমেনী তরুণী

রাহবার২৪

রাহবার: মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি, যদি আল্লাহ আকাশ থেকে কোন খাবার পাঠাতো! যু’দ্ধবি’ধ্বস্ত দেশ ইয়েমেনের ১৯ বছরের তরুণী সিদরাতুল মুনতাহা এভাবেই নিজের আকুতি জানিয়েছেন।

দেশটির মানুষ অনেক আগে থেকেই তীব্র কষ্টে জীবনযাপন করছে। বর্তমান বিশ্ব যে লকডাউন ভোগ করছে এটার সঙ্গে তারা পরিচিত অনেক আগ থেকেই।

গত দুদিন ধরেসামাজিক মাধ্যমে মুনতাহার একটি মেইলের বঙ্গানুবাদ ঘোরাঘুরি করছে। পাঠকদের জন্য সেটা তুলে ধরা হলো। ইয়েমেনের রুমাহ শহরের আকাদি গ্রাম থেকে ১৯ বছর বয়সী মুনতাহা নামের একটি মেয়ে আমাকে মেইল পাঠিয়েছে।

মেইলটি এসেছে গত তিন দিন আগে, হঠাৎ আজকে মেইলটা চোখে পড়েছে। মেইলে কি লিখেছে সেটা পরে বলি।
আগে সিদরাতুল মুনতাহার পরিচয় দেই। রুমাহ শহরটি ইয়েমেনের রাজধানী সানা থেকে প্রায় ৯৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব ওমান-সৌদি আরব সীমান্তে অবস্থিত।

আর ’কাদি গ্রামটি রুমাহ শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ী অঞ্চল অবস্থিত। সেই গ্রামে বাস করে মুনতাহা। এই আকাদি গ্রামেই আমাদের ডিউটি ছিল।

ইয়েমেন সফরের সময় মুনতাহাকে আমি প্রথম দেখি ওই গ্রামে যাওয়ার পর। দ্বিতীয় দিনে ক্যাম্প এসেছিল ওষুধ নিতে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা মেয়েটার চেহারা আর চাঁদের মাঝে কোন তফাৎ করতে পারবেন না। আমার মনে হয় চাঁদের চেয়েও মুনতাহা বেশি সুন্দরী। কিন্তু, দীর্ঘদিন খাদ্যের অভাব আর নিজের যত্ন না নেওয়ায় সেই চেহারায় একটা দুঃখের ছাপ পড়ে গেছে। প্রথম দেখে আমার খুব মায়া লেগেছিল। কাছে ডেকে নিয়ে কথা বললাম। সব জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু ইংরেজি অল্প বােঝে । একটুও বলতে পারে না। আমাদের গাইড এর সাহায্য নিয়ে ওর কথাগুলো শুনলাম। ও আরবিতে বলছিল আর গাইড আমাকে ইংলিশে ট্রান্সলেট করে বলছিল। ওর ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে ছিল ভালো পড়াশোনা করছিল হঠাৎ দেশে যু’’দ্ধ নেমে এলো।

পরিস্থিতি এখন পুরোটাই উল্টো। ডাক্তারের কথা ভুলে গিয়ে দু’মুঠো খাবারের জন্য এখন সংগ্রাম করতে হয়। মা বাবার একমাত্র মেয়ে। ৯দিন ছিলাম ৯দিনই আমাদের ক্যাম্পে আমাদের সাথে রেখে দিয়েছিলাম। আসার সময় সে কি কান্না! এবার আসি মেইলে কি লিখেছে। ভালোবাসার হিমাদ্রি আপু, অনেকগুলাে ক্ষুধার্ত মানুষের ভালোবাসা নিবেন। গত ১৮ ঘণ্টায় এখানে খাবার পানি আসেনি। আমি গত ১দিন আগে শেষ রুটি খেয়েছি।

আজ সকালে দু’টো খেজুর, দুপুরে এখন পর্যন্ত কিছু খাইনি। অনেক কষ্ট করে এখানে হেঁটে এসে একজন আন্তর্জাতিক সাংবাদিকের অনেক হাত পা ধরে আপনাকে এই মেইল পাঠাচ্ছি। বাবা-মা দাঁড়াতে পারে না।

গত এক সপ্ত াহ ধরে চার পায়ের জন্তুর মত মাটিতে হাটে, এত ক্ষুধা তাদের। গত কয়েক সপ্ত াহ টক গাছের পাতা সিদ্ধ করে ভর্তা করে খেয়েছিলাম। এখন সে পাহাড়ের গাছগুলোর পাতা ও শেষ হয়ে গেছে। সামনে রমাদান আসছে! জানিনা কিভাবে সাহরি করব কি দিয়ে ইফতার করব৷

আপনারা যারা এসেছিলেন যদি দ’য়া করে রমাদানের আগে আরেকবার আসেন! অন্তত একটু খাবার পানি নিয়ে আসেন! অথবা, ৫ কেজি আট’া দেন যাতে আমি, আমার মা আর বাবা রমাদানের রোজাগুলো রাখতে পারি। মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি, যদি আল্লাহ আকাশ থেকে কোন খাবার পাঠাতো! আমাদের দুঃখ গুলাে শুধু আমাদের আশপাশের পাহাড় ছাড়া কেউ দেখেনা। আপনার সাথের সকল সঙ্গীদের সালাম দেবেন। আপনাদের ফেরার অপেক্ষায়…

Follow us

get in touch. stay updated.

জনপ্রিয়