হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদরাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, হক্কানী ওলামায়ে কেরামের ঈমানী আন্দোলন কোন দল বা পার্টির বিরুদ্ধে নয় ৷ মুসলমানদের ঈমান-আকিদা রক্ষার জন্যই হক্কানী ওলামায়ে কেরাম আন্দোলন করেন ৷ ইসলাম বিরোধী অপশক্তি আর নাস্তিক মুরতাদের বিরুদ্ধে হক্কানী ওলামায়ে কেরামের আন্দোলন ছিল, আছে, থাকবে, ইনশাআল্লাহ!
দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি ৷
আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন, একটা রাষ্ট্রের মূল ভিত্ত হলো সংবিধান ৷ সংবিধান কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী হলে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্র শান্তিময় হয় ৷ সংবিধান মানবরচিত হলে সেই সংবিধানের মাধ্যমে মানব জীবনে কোন কল্যাণের আশা করা যায় না ৷ মানব-প্রণীত সংবিধান দ্বারা কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি, হচ্ছেনা, হবেও না ৷
তিনি আরো বলেন, মুসলমান হিসেবে একজন মানুষের ঈমানের দাবি আর বিশ্বাস হলো, মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করা ৷ আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন ছাড়া ঈমানদার হওয়া যায় না ৷ সেজন্যে একজন মুসলমানের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের মূলনীতি থাকা বাধ্যতামূলক৷
বাংলাদেশ ৯০% মুসলমানের দেশ ৷ সংবিধান রাষ্ট্রের মূল হিসেবে সংবিধানের মূল ভিত্তি যদি আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা বিশ্বাসের উপর না থাকে তাহলে মুসলমানদের জীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে ৷ সংবিধানে আল্লাহর উপর আস্থা বিশ্বাস না থাকলে একজন মুসলমান ব্যক্তি হিসেবে মুসলমান স্বীকৃত হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলমান স্বীকৃত হয় না৷ তাই মুসলমানের দেশের সংবিধানে “আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের মূলনীতি পূর্ণঃস্থাপন করতে হবে ৷ এটা এদেশের তৌহিদী জনতার প্রাণের দাবী ৷
আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন, মহান আল্লাহ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তিকারী নাস্তিক মুরতাদের বিরুদ্ধে হক্কানী আলেমদের ঈমানী আন্দোলন চলবেই ৷ মুসলিম উম্মাহর ঈমান আকিদা রক্ষার্থে এদেশের হক্কানী ওলামায়ে কেরাম প্রয়োজনে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে নাস্তিক মুরতাদের বিরুদ্ধে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে ৷
তাবলীগের চলমান সংকট নিরসনের ব্যপারে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, দাওয়াতে তাবলীগের চলমান সংকটের মূল কারণ হলো পূর্বেকার তিন হযরতদের অনুসরণ না করা এবং ওলামায়ে কেরামের সাথে তাবলীগী সাথীদের দূরত্ব ৷ তাই চলমান সংকট নিরসনে ইলিয়াস রহ., হযরতজ্বী ইউসুফ রহ. ও হযরতজ্বী ইনামুল হাসান রহ.এর অনুসরণ করে হক্কানী ওলামায়ে কেরামের দিক নির্দেশনা মেনে তাগলীগের কাজ করতে হবে ৷
আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন, দাওয়াত ও তাবলীগের সূচনাকাল থেকেই হক্কানী ওলামায়ে কেরাম এ মোবারক মেহনতের সাথে জড়িত ছিলেন ৷ হযরত হাকীমুল উম্মাত আশরাফ আলী থানভী রহ.,সায়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.,আল্লামা যাফর আহমদ উসমানী রহ, শাইখুল হাদীস জাকারিয়া রহ.,আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী রহ, আল্লামা মনজুর নোমানী রহ সহ তৎকালীন সময়ের বড় বড় ওলামায়ে কেরাম এ কাজ করেছেন ৷
ওলামাযে কেরামের কুরবানীর বদৌলতেই তাবলীগের কাজ আজ পুরো বিশ্বে চলছে ৷ তাই সকল ফিৎনা থেকে বাঁচতে তিন হযরতের পথ অনুসরণ করে ওলামায়ে কেরামের সার্বিক তত্বাবধানে এ কাজ করতে হবে ৷
দারুল উলুম হাটহাজারীর স্বনামধন্য মুহতামিম হযরত আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে বার্ষিক মাহফিল ও দস্তাবন্দী সম্মেলনে অন্যান্যদের মাঝে আরো বয়ান করেন মাওলানা নুরুল ইসলাম ঢাকা , মাওলানা শেখ আহমদ, মাওলানা নোমান ফয়জী, মুফতী আহমদুল্লাহ পটিয়া, মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা আজীজুল হক আল মাদানী, মাওলানা ডক্টর আ ফ ম খালেদ হোসাইন,মাওলানা সাজিদুর রহমান বি-বাড়িয়া, মুফতী মাহমুদুল হাসান বাবুনগর, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়্যুবী, মাওলানা আব্দুল বাসেত খান, মাওলানা সলিমুল্লাহ, মুফতী জসিমুদ্দীন, মাওলানা লোকমান হাকীম, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী প্রমূখ৷
মাহফিল শেষে ২০১৭ -১৮ শিক্ষাবর্ষে দাওরায়ে হাদীস সমাপ্তকারীদের দস্তারে ফজিলত (বিশেষ সম্মাননা পাগড়ী) প্রদান করা হয়। (বিজ্ঞপ্তি)