রাহবার২৪

বাবার চেম্বারে রোগী দেখেন মাধ্যমিক পাশ ছেলে! অঙ্গ হারাতে বসেছে ২ বছরের শিশু

রাহবার২৪

রাহবার: সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার আমিরুল ইসলাম মধুর ছেলে আকিব হোসেন আকাশ (ডি.এম.এফ-ঢাকা) নিজেকে পরিচয় দেন মা, শিশু ও কিশোর রোগে অভিজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে। তার বাবা কোমরপুরস্থ শাহিদা সেবা কেন্দ্রে (রেজিঃ নং- ৮৯০৫২৪) চিকিৎসা প্রদান করেন। আর সেই সুবাদে উচ্চ মাধ্যমিক গণ্ডি না পেরিয়ে বাবার চেম্বারে নিজেই হয়ে গেছেন অভিজ্ঞ ডাক্তার। শুধু তাই নয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মত নিজের নামে ব্যবস্থাপত্র ছাপিয়ে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা প্রদান করছেন আকাশ।

তার এই অপচিকিৎসায় বলি হয়েছেন উপজেলার ভাতশালা গ্রামের আলামিন সরদারের প্রায় ২ বছর বয়সের শিশু আজিম হোসেন। হাতুড়ে চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় বর্তমানে শিশুটির শরীরের ডান পাশ পুরোপুরি অচল হতে বসেছে। এ ঘটনায় শিশুটি এখন প্রতিবন্ধী হওয়ার উপক্রম।

শিশুর দাদা গোলাম রসুল সরদার জানান, গত শুক্রবার আমার পোতা বাড়িতে খেলা করার সময় খাট থেকে মেঝেতে পড়ে আঘাত পায়। পরিবারের সদস্যরা মিলে কোমরপুরস্থ শাহিদা সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। এ সময় চেম্বারে গ্রাম্য চিকিৎসক আমিরুল ইসলাম মধু না থাকায় তার ছেলে আকিব হোসেন আকাশ কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই শুরু করেন অপচিকিৎসা। এরপর পূর্ণ বয়সী মানুষের ইনজেকশন শিশুর শরীরের কোমরে পুশ করে।

তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যরা শিশুটিকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। আসার পরপরই শিশুর দেহের হাত, পা নিস্তেজ ও গাল বেঁকে যেতে থাকে। এরপর তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় প্রতিবেশীদের পরামর্শে সাতক্ষীরার শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আজিজুর রহমানের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার আজিজুর রহমান পূর্বের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে নতুনভাবে চিকিৎসা শুরু করেন। এ সময় গ্রাম্য ডাক্তারের দেওয়া চিকিৎসা ভুল বলে জানান তিনি।

এদিকে, ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মধু ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে কথা হয় তার সাথে। এই অপচিকিৎসার কথা জানতে চাইলে দায় স্বীকার করেন আকাশ। তবে মধু ডাক্তারের চেম্বারের কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এমনকি তার ছেলে আকাশ নিজেই কত সালে এসএসসি পাশ করেছেন সেটিও সঠিক করে বলতে পারেননি। একজন মাধ্যমিক পাশ ছাত্র কীভাবে মা, শিশু ও কিশোর রোগে অভিজ্ঞ সে বিষয়ে জানাতে চাওয়া হলে মধু ডাক্তার তার নিজের অভিজ্ঞতায় তার ছেলে অভিজ্ঞ বলে জানান।

তবে বিষয়টি নিয়ে আবিক হোসেন আকাশ জানান, তার বাবার চেম্বারে সে নিজেই রোগী দেখেন। ঢাকা থেকে তার ট্রেনিং করা আছে। শিশুটি ব্যথা পেয়েছিল ভেবে ইটোরাক-৩০ (Etorac-30) প্রদান করি। কিন্তু পরে জানতে পারছি ইনজেকশনটি শিশুদের জন্য ক্ষতিকর।

এ বিষয়ে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর লতিফ জানান, গ্রাম ডাক্তাররা ব্যবস্থাপত্র লিখতে পারেন না। তবে অধিকাংশরাই এটি মানেন না। বর্তমানে অনেক গ্রাম ডাক্তাররা ভুল চিকিৎসা প্রদান করছেন বিষয়টি শুনেছি। তবে তিনি যে কোনো বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা জানান।

Follow us

get in touch. stay updated.

জনপ্রিয়