রাহবার: প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের কারণে দেশে দেশে চলছে লকডাউন। স্থবির হয়ে গেছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ধরণের অর্থনৈতিক কার্যক্রম। এই পরিস্থিতিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া অসহায় দরিদ্র মানুষেরা। একদিকে করোনায় আক্রান্তের ভয়, অন্যদিকে কর্মহীন হয়ে ঘরে খাবার নেই। জীবন না জীবিকা সেই নিষ্ঠুর প্রশ্নের মুখোমুখি এখন অসহায় মানুষেরা।
দারিদ্রতার কষাঘাতে জীবন যায় যায়। ঘরে খাবার নেই, চুলো জ্বলছে না কিন্তু পেট তো আর মানে না। খাবারের জন্য ৮ সন্তানের কান্না কিছুতেই থামছে না। ক্ষুধার্ত সন্তানদের সান্তনা দিতে পাশে বসিয়ে পাতিলে পাথর বসিয়ে রান্নার ভান করছেন অসহায় মা! এই আশায় যে, বাচ্চারা খাবারের অপেক্ষা করতে করতে এক সময় হয়তো ঘুমিয়ে পড়বে। এমনি এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা গেল আফ্রিকার দরিদ্র দেশ কেনিয়ায়।
কেনিয়ার উপকূলীয় শহর মোম্বাসার ঘটনা এটি। এমন মর্মস্পর্শী ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
রান্না বসানো ওই নারীর নাম পেনিনা বাহাতি কিতসাও। তিনি বিধবা। আট সন্তানের জননী। স্বামীকে হারিয়ে স্থানীয় একটি লন্ড্রিতে কাজ নেন অক্ষরজ্ঞানহীন কিতসাও। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সরকারি বিধিনিষেধের কাজটি হাতছাড়া হয়ে গেছে তার। ফলে ঘরে খাবার নেই। কিন্তু পেট তো আর লকডাউন মানে না। ক্ষুধার জ্বালায় কোনোভাবেই থামছিল না শিশুদের কান্না। উপায় না পেয়ে পাতিলে পাথর রেখে চুলোয় আগুন ধরিয়ে বাচ্চাদের ধোঁকা দেয়ার পথ বেছে নেন মা। হৃদয়বিদারক ঘটনাটি নজরে পড়ে প্রতিবেশী প্রিসকা মোমানির। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে জানান তিনি।
কেনিয়ার এনডিটিভিতে এ নিয়ে মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ওই মাকে সাহায্যের শেষ নেই মানুষজনের। প্রতিবেশী মোমানির মাধ্যমে অনেকে মোবাইল ফোন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছেন।
সহায় সম্বলহীন কিতসাও দুটি বেডরুমের যে বাড়িতে থাকেন সেখানে নেই পানি বা বিদ্যুতের সংযোগ। মানুষের উদারতায় মুগ্ধ তিনি। সাহায্য পেয়ে কিতসাও বলেন, আমি বিশ্বাস করতাম না, যে কেনিয়ানদের এত দয়া আছে। সারা দেশ থেকে আমি ফোন পেয়েছি, কিভাবে তারা সাহায্য করতে পারে জানতে চাচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪০০ কাছাকাছি। মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। সরকারি নির্দেশে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন।
উৎস, বিবিসি।