ভারতের সবরীমালা মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলারা প্রবেশ করতে পারছে না দীর্ঘ প্রায় শত বছর ধরে। এ বয়স নারীদের মাসিক কালীন বয়স বলে তাদের ওপর দেশটির বিভিন্ন উগ্র হিন্দু গোষ্ঠীর মুখে এই নিষেধাজ্ঞা।
তবে দেশটির আদালত তিন মাস আগে এক রায়ে বলেন, সব বয়সী নারীরা ওই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন। কিন্তু আদালতের রায়ের পরও মহিলারা ওই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারতেন না উগ্র হিন্দুধর্মীয় গোষ্ঠীর বাধার কারণে।
দেশটির পুলিশ বলছে, বুধবার ভোরে ৫০ অনূর্ধ্ব দুই মহিলা সবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করেন। ওই দুই মহিলা কেরলের বাসিন্দা। একজনের নাম বিন্দু আরেক জন কণকদুর্গা।
তবে পুলিশের সাহায্যেই তারা মন্দিরে প্রবেশ করেছে বলে জানা যায়। পুলিশ কোর্টের নির্দেশ পালনার্থে তাদেরকে সুযোগ করে দেন।
কিন্তু তাতে বিষয়টি শেষ হয়ে যায়নি। মন্দিরে দুই মহিলার প্রবেশ ঘিরে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে মেতে উঠে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ও আয়েপ্পা ভক্তরা। গত বুধবার ভোররাত থেকেই মন্দিরকে ঘিরে জল্পনা আরো তীব্র হয়। মন্দিরে প্রবেশের কথা জানাজানি হতেই হিন্দুত্ববাদী সংগঠন গুলি মন্দির চত্বরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
বৃহস্পতিবার থেকে অচলাবস্থা দেখা দেয় গোটা রাজ্যে। প্রতিবাদ বিক্ষোভ হরতালে ক্রমশই হিংসামুখী হয়ে ওঠে তিরুঅনন্তপুরম। হরতালে সরকারি দল বিজেপির সমর্থনও পেয়ে যায় তারা।
বিক্ষোভ চলাকালীন বেশকিছু গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় এবং একাধিক দোকানঘর ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন শবরীমালা কর্মসমিতি ও আন্তঃরাষ্ট্র হিন্দু পরিষদের বিরুদ্ধে। ৭৪৫ জনকে এই হিংসাক্তক ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে এখন পর্যন্ত।
এদিন বৃহস্পতিবার হিন্দুত্ববাদী সংগঠন গুলির বিক্ষোভ কর্মসূচির কভারেজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন এক মহিলা চিত্র সাংবাদিক। বিক্ষোভকারীদের প্রতিটি গতিবিধি ক্যামেরা বন্দি করছিলেন কেরলের ‘কৈরালি’ টিভি চ্যানেলের মহিলা চিত্র সাংবাদিক সাজিলা আলি ফাতিমা। সেই সময়ই কিল-চড়ের ঝড় আছড়ে পড়ে তার উপর। দুঃখ-যন্ত্রনায় চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসে তাঁর। তবুও ক্যামেরা কাঁধ থেকে নামেনি তার। সোশ্যাল মিডিয়ার সাজিলার ছবি ভাইরাল হতেই প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সাধারণ স্তরের মানুষ এবং ঘৃণা জানাতে থাকে হিন্দুত্ববাদী উগ্র গোষ্ঠীর প্রতি।