রাহবার২৪

মাওলানা সাদ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত! জনসমাবেশ করায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি !!

মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ, তিনি নিজামুদ্দিন মারকাজে মানুষকে জমায়েত হতে উৎসাহ দিয়েছেন। করোনা সংক্রমণ রুখতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞার সময় তিনি এই কাজ করেছেন। এমনকি তিনি বাড়ি খালি করে দেওয়ার দু’টি পুলিশি বিজ্ঞপ্তিও অগ্রাহ্য করেন।

সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে জমায়েত করায় ভারতের দিল্লির নিজামুদ্দীনের তাবলীগ জামা‘আতের আমীর মাওলানা সাদ কান্ধলভির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এফআইআর দায়েরের পর থেকেই তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ। যদিও এখনো পর্যন্ত তার খোঁজ মেলেনি।
এর মধ্যেই মাওলানা সাদ কান্ধলভির করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। এ অবস্থায় তিনি কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন বলে জানা যায়।
ভারতে দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। এরই মধ্যে দিল্লির নিজামুদ্দিনে তাবলীগ জামা‘আত-এর সম্মিলনে সব মিলিয়ে প্রায় ৯,০০০ মানুষের জমায়েতের বিষয়টি সামনে আসে। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া ২১ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মৃত্যু হয়েছে দু’জনের।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, মনে করা হচ্ছে, অন্তত ৪০০ জন করোনা আক্রান্তের যোগসূত্র রয়েছে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে নিজামুদ্দিন মারকাজের তাবলীগের আমীর ৫৬ বছর বয়সী মাওলানা সাদ কান্ধলভির খোঁজ নেই। গত ২৮ মার্চ থেকে তাকে খুঁজছে পুলিশ।
সূত্রের বরাতে এনডিটিভি বলছে, মাওলানা সাদও করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। দিল্লি পুলিশের বেশ কয়েকটি দল উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরেও অভিযান চালিয়েছে। তল্লাশি চলছে রাজধানী দিল্লিতেও। ১৪টি হাসপাতালের সঙ্গেও পুলিশ যোগাযোগ করেছে।
মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ, তিনি নিজামুদ্দিন মারকাজে মানুষকে জমায়েত হতে উৎসাহ দিয়েছেন। করোনা সংক্রমণ রুখতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞার সময় তিনি এই কাজ করেছেন। এমনকি তিনি বাড়ি খালি করে দেওয়ার দু’টি পুলিশি বিজ্ঞপ্তিও অগ্রাহ্য করেন।
আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, একশো বছরের বেশি বয়স নিজামুদ্দীনের ওই বাড়িটির। নিজামুদ্দীনের ওই ঘটনায় মাওলানা সাদ ছাড়াও মারকাযের আরও ছয় জনকে খুঁজছে দিল্লি পুলিশ।
এর মধ্যে ১ এপ্রিল মাওলানা সাদের নামে দু’টি অডিও প্রকাশ্যে আসে। মারকাজ ইউটিউব চ্যানেলে প্রথম অডিওতে বলা হয়েছে, মসজিদই মৃত্যুর জন্য সেরা স্থান।
ইন্ডিয়া টিভির খবরে বলা হয়েছে, ওই অডিও টেপটি গত ১৮ মার্চ ধারণ করা। এতে মাওলানা সাদকে বলতে শোনা যায়, “মসজিদে জড়ো হলে রোগ পয়দা হবে এই চিন্তা সম্পূর্ণ বাতিল চিন্তা। আপনার যদি এই চিন্তা আসে যে, মসজিদে আসার কারণে মানুষ মারা যাবে, তাহলে মৃত্যুর জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা আর হতেই পারে না।”
তবে মহামারি ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে মামলা দায়েরের পর আত্মগোপনে থাকা মাওলানা সাদের দ্বিতীয় অডিওতে তার সূর সম্পূর্ণ ভিন্ন দেখা যায়। এতে তিনি মত পাল্টিয়ে বলেন, “নিঃসন্দেহে পৃথিবীতে যা হচ্ছে তা মানুষের অপরাধের ফল। আমাদের ঘরে থাকা উচিত। এটাই সৃষ্টিকর্তার ক্রোধকে শান্ত করতে পারে। চিকিৎসকদের পরামর্শ মানুন এবং প্রশাসনের সঙ্গে সহায়তা করুন। কোয়ারেন্টাইনে থাকুন, সে আপনি যেখানেই থাকুন না কেন। এটা ইসলাম বা শরিয়ত বিরোধী নয়।“
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, মাওলানা সাদ নিজেই করোনায় আক্রান্ত। দ্বিতীয় অডিওতেও তার ইঙ্গিত আছে। তিনি সেই অডিওতে বলেন–“আমি দিল্লিতে আজ ডাক্তারেরর পরামর্শ
 মোতাবেক নিজেকে কোয়ারেন্টাইনে নিয়েছি। এটি একীন, তাওয়াক্কুল, ঈমানের মোটেও বিরোধী কাজ নয়। যেখানেই আমাদের জামা‘আত আছে নিজ নিজ সরকারের নির্দেশনা অবশ্যই মেনে চলবেন।”
এর আগে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে জমায়েতের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর অভিযোগে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ নেতা মাওলানা সাদ কান্ধলভি ও নিজামুদ্দিন মারকাজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে দিল্লি পুলিশ। সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে তাবলীগ জামা‘আতের বড় জমায়েত হয়েছিল। সেখানে বহু বিদেশি মেহমান ছিলেন বলে জানা গেছে। সেখান থেকে করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। নিজামুদ্দিনের ওই মসজিদে যোগ দেয়ার পর মোট সাত জন মারা গেছেন। এরই মধ্যে মসজিদটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দিল্লি পুলিশ আগেই নোটিশ দিয়েছিল সাদ সাহেবকে। তবে গত ২৮ মার্চ থেকেই তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টিভির খবরে বলা হয়, ওই জামা‘আত থেকে ফিরে দিল্লিতে ২৪ জন, তেলেঙ্গানায় ৬ জন, আন্দামানে ১০ জন, কাশ্মীরে একজন ও তামিলনাড়ুতে ৫০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ওই জামা‘আতে ৮২৪ জন বিদেশি ছিলেন। ইতোমধ্যে পুলিশ সেই তথ্য সংগ্রহ করেছে। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ওই আবেদনে উল্লেখ করে যে, ওই জামা‘আতে উপস্থিতদের মধ্যে ৯৪ জন ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার, ১৩ জন কিরগিস্তানের, ৯ জন বাংলাদেশের, ৮ জন মালয়েশিয়ার, ৭ জন আলজেরিয়ার। এ ছাড়া তিউনিসিয়া, বেলজিয়াম ও ইতালি থেকে একজন করে এসেছিলেন। বাকিরা ছিলেন ভারতীয়। ওই জামা‘আতে যারা অংশ নিয়েছিলেন তারা শহরের ১৬টি মসজিদে ছিলেন।
এদিকে গত ৩৬ ঘণ্টায় ওই মার্কাজ থেকে ২ হাজার ৩৬১ জনকে সরিয়ে নেয়া হয়। তাদের মধ্যে ৬১৭ জনকে করোনার আলামত থাকায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুরো এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে। এখান থেকে বিভিন্ন রাজ্যে গেছেন মানুষজন। ফলে সব রাজ্যকেই কড়া নজর রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাদ সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা ও প্রেফতারী পরোয়ানা জারি করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেওবন্দের মুখপাত্র মাওলানা আরশাদ মাদানীসহ ভারতের আলেমগণ। তারা বলেন, নিজামুদ্দীনের সমাবেশের মতো ভারতে অনেক সমাবেশ ইতোমধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা করেছেন। কিন্তু এ্যাকশন শুধু মুসলমানদের উপরে কেন? তা ছাড়া সারাবিশ্বে যেখানে নির্বিচারে মানুষ করোনা মহামারিতে আক্রান্ত হচ্ছে, নিজামুদ্দীনে করোনায় আক্রান্তের ঘটনা সে রকমই। তাই নিজামুদ্দীনের বিরুদ্ধে  এ সাম্প্রদায়িক মনোভাব মেনে নেয়া যায় না।

Follow us

get in touch. stay updated.

জনপ্রিয়