রাহবার২৪

পাকিস্তানে শীর্ষ আলেমগণের প্রেস কনফারেন্স : মসজিদ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত জ্ঞাপন (ভিডিও-ডকুমেন্টসহ)

পাকিস্তানের করাচী শহরস্থ জাতীয় প্রেসক্লাবে পাকিস্তানের সর্বস্তরের উলামায়ে কিরাম বরেণ্য আলেমে দ্বীন শাইখুল ইসলাম মুফতী তাকী উসমানী সাহেবের সদারতে প্রেস কনফারেন্স করে সে দেশের মসজিদগুলোকে উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য সে দেশের সরকারের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।

মসজিদ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জ্ঞাপন করলেন শাইখুল ইসলাম

মুফতী তাক্বী উসমানীর নেতৃত্বে পাকিস্তানের সর্বস্তরের শীর্ষ আলেমগণ

 

গতকাল ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় পাকিস্তানের করাচী শহরস্থ জাতীয় প্রেসক্লাবে পাকিস্তানের সর্বস্তরের উলামায়ে কিরাম বরেণ্য আলেমে দ্বীন শাইখুল ইসলাম মুফতী তাকী উসমানী সাহেবের সদারতে প্রেস কনফারেন্স করে সে দেশের মসজিদগুলোকে উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য সে দেশের সরকারের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন। সেখানে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সকলশ্রেণীর মুসলিম জাতি ও সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে মুফতী তাক্বী উসমানী ও পাকিস্তানের চাঁদ দেখা কমিটির চেয়ারম্যান মুফতী মুনিবুর রহমানসহ সেখানে উপস্থিত ছিলেন জিওয়াই সিন্দের সেক্রেটারি জেনারেল আল্লামা রাশেদ মাহমুদ, মাওলানা আয়িস নুরানি, মুফতী ডা. আদেল, মাওলানা মুহাম্মাদ সালাফি, ডা. আসরার প্রমুখ। এছাড়াও এতে টেলিফোনে সংযুক্ত হয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (এফ) সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর আমীর সিনেটর সিরাজুল হক ও সিনেটর সাজেদ মীর প্রমুখ।

সেই সাথে বর্তমান করোনার ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতিতে ‍মুসল্লীগণের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার দিকটিও যথেষ্টভাবে বিবেচনা করা হয় উক্ত প্রেস কনফারেন্সে । সেই লক্ষ্যেই পাকিস্তানের উক্ত সম্মেলনে বর্তমান করোনা ভাইরাসের দুযোর্গময় পরিস্থিতিতে মুসল্লীগণের মসজিদে যাওয়া, সেখানে অবস্থান করা এবং সেখান থেকে ফিরে আসার সময়গুলোতে তাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার যাবতীয় নিয়ম-নীতি মেনে চলা এবং মসজিদের পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থাপনা ও ইমাম-খতীব সাহেবানের এ সম্পর্কিত করণীয়-কর্তব্যের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়। এ মর্মে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে পঠিত ইশতিহার পাঠ করে শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকী ‍উসমানী (দা. বা.) এ সংক্রান্ত দিক-নির্দেশনা প্রদান করে বলেন–

১. সতর্কমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে মসজিদসমূহ খোলা রাখা হবে এবং সেখানে মুসল্লীগণের সংখ্যা (৫/১০) নির্ধারণ ছাড়াই পাঁচওয়াক্ত নামায ও জুমু‘আর নামায চালূ থাকবে।

২., যারা অসুস্থ অথবা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং যারা সেসকল রোগীদের সেবা-শুশ্রুষায় নিয়োজিত আছেন, তারা মসজিদে আসবেন না। তারা ঘরে নামায পড়ে মসজিদের জামা‘আতের ছাওয়াব লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ।

৩. বয়ঃবৃদ্ধ ব্যক্তিদের ব্যাপারে যেহেতু ডাক্তারগণের অভিমত এই যে, তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে তারা মহামারির টার্গেটে পরিণত হতে পারেন, এ জন্য তারা নিজেদেরকে মসজিদে নেয়ার ব্যাপারে মা‘জুর মনে করে তাত্থেকে বিরত থাকবেন। (তাই তারাও মসজিদে আসবেন না। তারাও ঘরে নামায পড়ে মসজিদের জামা‘আতের ছাওয়াব লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ।)

৪. মসজিদগুলো থেকে কার্পেট সরিয়ে প্রত্যেক নামাযের পর জীবানু নাশক উপকরণ দ্বারা মসজিদগুলোকে মুছে ফেলতে হবে।

৫. মসজিদসমূহের দরজার নিকট যথাসাধ্য হ্যান্ড-স্যানিটাইজার রাখার ব্যবস্থার করতে হবে। এ ব্যাপারে মসজিদ এলাকার বিত্তশালী ব্যক্তিগণ নিজেদের উদ্যোগে ব্যবস্থা নিবেন।

৬. মসজিদের কাতারসমূহের মাঝে এ নিয়ম বজায় রাখবেন যে, প্রত্যেক এক কাতারের পর একটি কাতার খালি রাখবেন। আর প্রত্যেক কাতারের মধ্যে মুক্তাদীগণ পরস্পর ফাঁকা রেখে একে অপর থেকে মুনাসিব দুরত্ব বজায় রাখবেন। যদিও মুসল্লীগণের পরস্পর এভাবে ফাঁক ফাঁক হয়ে দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানো স্বাভাবিক অবস্থায় মাকরূহে তাহরীমী, কিন্তু বর্তমানে করোনার দুর্যোগের উজরের কারণে তা মাকরূহ হবে না।

৭. সকল মুসল্লী ঘর থেকে উজু করে মসজিদে আসবেন।

৮. মুসল্লীগণ হাত সাবান দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে এবং মাস্ক পরে মসজিদে আসবেন। (এ অবস্থায় মাস্ক পরে নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই।)

৯. মুসল্লীগণ ফরজের পূর্বের সুন্নাত নামায ঘরে পরে মসজিদে আসবেন এবং ফরজের পরের সুন্নাত বা নফল নামায ঘরে গিয়ে পড়বেন। অর্থাৎ মসজিদে শুধু ফরজ নামায আদায় করবেন।

১০. খতীব সাহেবগণ জুমু‘আর নামাযে খুৎবাহর পূর্বের বাংলা-বয়ান বন্ধ রাখবেন। যদি একান্ত ঠেকা হয়, তাহলে ৫ মিনিটে এ সময়ের জরুরী ব্যবস্থাদি সম্পর্কে জানাতে পারেন।

১১. খতীব সাহেবগণ জুমু‘আর খুৎবাহকে সংক্ষিপ্ত করবেন এভাবে যে, হামদ-সালাতের পর তাকওয়া সম্পর্কিত একটি আয়াত পড়বেন। তারপর মুসলমানদের জন্য দু‘আ করে খুৎবাহ শেষ করবেন। (এভাবে উভয় খুৎবাহ সংক্ষেপে পড়বেন। নামাযের সূরাহ ও মুনাজাতও সংক্ষিপ্ত করবেন।)

১২.নামাযের পর মুসল্লীগণ চাপাচাপি বা ঘেঁষাঘেঁষি না করে একে অপর থেকে মুনাসিব দুরত্ব বজায় রেখে যার যার বাসায় যাবেন।

১৩. মসজিদসমূহের ইমামগণ মুসল্লীদেরকে এ সকল যাবতীয় নিয়ম মেনে চলার প্রতি উদ্বুদ্ধ করবেন। তবে এসব কে মানছেন আর কে মানছেন না–এটা দেখার দায়িত্ব ইমাম সাহেবগণের নয়। বরং সেটা কর্তৃপক্ষ দেখবেন। তাই মুসল্লীদের কোন ব্যাপারে ইমাম সাহেবগণকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। আর ইতোপূর্বে যে সকল ইমামকে এ ব্যাপারে দোষী বানিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদেরকে অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে হবে।

পরিশেষে পারস্পরিক ভেদাভেদ ভুলে সকলকে দেশ ও জনগণের জন্য দু‘আ করার জন্য বলা হয়। যাতে মহান আল্লাহ বান্দাদের প্রতি রহম করেন এবং দেশে অবিলম্বে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে।

 

——————————————————————–

উক্ত প্রেস কনফারেন্সের ভিডিও-ডকুমেন্ট নিম্নে প্রদত্ত হলো–

 

Follow us

get in touch. stay updated.

জনপ্রিয়